প্রধান মেনু

মাদক ও জঙ্গীবাদবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা পুলিশিং সমন্বয় কমিটির আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মাঠে মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশ খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম এর নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সদ্য আত্মসমার্পনকারী ৪৩০ জন মাদক ব্যবসায়ী যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায় তাদেরকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বর থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মাঠে সমাবেশ স্থানে এসে মাদকবিরোধী বর্ণাঢ্য র‌্যালি শেষ হয়।
মাদক ও জঙ্গীবিরোধী সমাবেশের আলোচনার শুরুতেই পবিত্র কোরআন, বাইবেল ও গীতা পাঠ করার পরপরই মাননীয় বাংলাদেশ পুলিশ খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম আত্মসমার্পনকারী মাদক ব্যবসায়ীরা ভালো পথে ফিরে আসার কারণে খুশি হয়ে নিজ হাতে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
মাদক ও জঙ্গীবিরোধী সমাবেশের আলোচনা সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশিং কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার মাসে আমরা এই স্বাধীনতা হঠাৎ করে পাইনি? এর জন্য আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। পাকিস্থানী হানাদাররা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার, জীবন ধারণের অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিলো সেই দিন আমরা খালি হাতে তাদের প্রতিরোধ করেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা কোথাও হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই। এমন কনো পরিবার পাবেন না, সেই পরিবারের অন্তত একজন সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হয়নি। এই ইতিহাস বিরল, তাই আমরা আজ মাথা উচু করে বলতে পারি বাঙ্গালী বীরের জাতি। পাকিস্থান সরকার যেদিন বলেছিলো উর্দুই হবে পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা সেইদিন পূর্ব বাংলার বীর সন্তানরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করেছিল এবং পরিশেষে বাংলা ভাষা পাকিস্থানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি ছিনিয়ে এনেছিলো। আজ এই ভাষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তারপর আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে চেয়েছে। কিন্ত পঁচাত্তর পরবর্তীতে আমাদের দেশের হালচিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে উত্তর উত্তর সাফল্য অর্জন করছি। এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলো বাংলাদেশ একটি তলা বিহীন ঝুড়ির দেশ। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এরা উন্নতি করতে পারবে না। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমরা উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই একসাথে মাদককে না বলি। কারো একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভাব নয়; এর জন্য পারিবারিক আন্দোলন গড়তে হবে। মাদক একটা পরিবারকে একটা সমাজকে একটা দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এর জন্য কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। মাদক ব্যবসার গডফাদার যারা মাদক ব্যবসার অর্থ বিনিয়োগ করেন তাদের প্রতি হুঁশিয়ারী উ”চারণ করে বলেন, আপনারা সাবধান হয়ে যান; না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি সভা সমাবেশে মাদক ও জঙ্গীবিরোধী কথা বলতে হবে। যে অনুষ্ঠানে মাদক ও জঙ্গীবিরোধী বিরুদ্ধে কথা বলবে না সেই সকল সভা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবীব, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির আহবায়ক এস.এম. ইস্রাফিল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামসুল আবেদিন খোকন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ আমাদের যে মাদকমুক্ত চুয়াডাঙ্গা উপহার দিতে যাচ্ছে তার সাথে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে কাজ করতে হবে। আমরা আপনাদের সাথে আছি। আমরাও দেখতে চায় মাদকমুক্ত চুয়াডাঙ্গা। মাদকমুক্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা উপহার দিতে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ আপনাদের সাথে আপনাদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী সমাবেশের সভাপতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ চুয়াডাঙ্গার মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সেই ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার মানুষ কতটা স্বোচ্চার তা আপনাদের দেখলে বোঝা যায়। আপনারা মাদকের ব্যবসা করবেন না, আপনাদের জন্য আমাদের সহযোগিতা সব সময় থাকবে। আশা করছি এই ৪৩০ জন মানুষের আন্দোলনের ফলে চুয়াডাঙ্গা থেকে মাদকমুক্ত হবে এটাই আমার বিশ্বাস। এরপরও যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকবে তাদের জন্য চুয়াডাঙ্গা পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যারা এই অনুষ্ঠানে আসেননি বা মাদক ব্যবসা এখনো করবেন বলে মন¯’ীর করে আছেন তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সমাবেশে আগত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী আন্দোলনের মতামত জানতে চাইলে কেউ কেউ বলেন, সমাবেশের সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মাদক ও জঙ্গীবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, সর্বশ্রেণীর মানুষকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে ও সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা যদি আরো কঠোর হয় তাহলেই চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে মাদকমুক্ত হবে।



« (পূর্বের খবর)