প্রধান মেনু

মহাকালের মহানায়ক ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী আজ বুধবার (১৮ জুলাই)। ১৯১৮ সালের আজকের দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের রাজধানী উমতাতার নিকটবর্তী মভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের এ অগ্রপথিক। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা বা মানুষের আদরের মাদিবা।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস আজ। বিশ্ববাসী বিনম্র শ্রদ্ধায় শান্তি ও স্বাধীনতার এ পুরোধার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে। বাংলাদেশেও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হচ্ছে অবিসংবাদী এ নেতাকে।

জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। জোহানসবার্গে অনুষ্ঠিত হবে এক বিশাল র‌্যালি। এতে নেতৃত্ব দেবেন আরেক কৃষ্ণাঙ্গ নেতা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর আগে, মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) জোহানসবার্গে দেওয়া এক ভাষণে ওবামা বলেন, ‘সত্যের অস্বীকৃতি বিশ্বের গণতন্ত্রগুলোর অবসান ঘটাতে পারে।’ এসময় গণতন্ত্রের প্রবক্তাদের ম্যান্ডেলার মতো অটল ও আশাবাদী থাকার কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কেবলমাত্র অন্ধ ভক্তি শেখাবে না, তাদের বিশ্লেষণাত্মক ভাবে চিন্তা করতেও শেখাবে। আট বছর ক্ষমতায় থেকে ২০১৭ সালে হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর এটি ছিল তার সব থেকে বড় মাপের অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্য।

জন্মশতবার্ষিকীতে ম্যান্ডেলার সম্মানে ক্রিকেট ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের পুরুষ ও নারী দল। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিডফেস্ট ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ২০ ওভারের এ ম্যাচ দুটি। এ বছর কাকতালীয়ভাবে মহাত্মা গান্ধীকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ট্রেন থেকে ফেলে দেয়ার ১২৫ বছর পূর্তি। শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত একমাত্র কামরা থেকে সরে যেতে অস্বীকার করলে পিটমারিজবার্গ রেলওয়ে স্টেশনে মহাত্মা গান্ধীকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। বর্ণবাদের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯২ সালে ফেরার পরে প্রথম খেলে ভারতের বিপক্ষে।

এর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির জনক নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এক প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। ম্যাচটি খেলতে বার্সেলোনাকে এক দিনের জন্য উড়িয়ে এনেছিল দক্ষিণ আফ্রিকান লিগ চ্যাম্পিয়ন মামেলোদি সানডাউনস। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বার্সাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যেতে প্রায় ৩০ লাখ ইউরো খরচ করেছেন মামেলোদি সানডাউনস মালিক প্যাট্রিস মোতসেপে।

ম্যান্ডেলার ৯৫ বছরের জীবনকালের দীর্ঘ ২৭ বছর কেটেছে কেপ টাউনের কুখ্যাত রবেন দ্বীপের কারাগারে। রাষ্ট্রযন্ত্র এসময় তার গায়ে নিছক সন্ত্রাসবাদী তকমা এঁটে দিয়ে, ৪৬৬/৬৪ নম্বর কয়েদি বানিয়ে, লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে, পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে, দিনের পর দিন তীব্র রোদে পাথর ভাঙিয়ে তিলে তিলে তাকে শারীরিক, মানসিক আর রাজনৈতিকভাবে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। অথচ কারাগার থেকে বেরিয়ে সেই ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের ক্ষমা করে দেন। উদ্যোগ নেন শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের একতাবদ্ধ করতে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘রংধনু দেশ’ হিসেবে গঠনে কাজ শুরু করেন।

দীর্ঘদিন কারাবাসের পর মুক্তির দিনে ভক্তদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ম্যান্ডেলা বলেন, তিনি এমন এক দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন দেখে, যেখানে সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে এক সঙ্গে থাকতে পারবে। তার ভাষায়, ‘এটা এমন এক আদর্শ, যার আশায় আমি বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু যদি দরকার হয়, এই আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’

ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে ৮ ফুট বাই ৭ ফুট কুঠুরির সেই অন্ধ কারাগারের দরজা। ওই সেলে এক রাত কাটাতে নিলাম ডাকা হয়েছে। এ পর্যন্ত উঠেছে ৩ লাখ ডলার। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে নিলাম থেকে পাওয়া টাকা জেলবন্দীদের শিক্ষায় খরচ করা হবে। ‘প্রিজন টু পাইপলাইন’ প্রকল্পের আওতায় জেলবন্দীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দিতে এমন পদক্ষেপ।

বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে থাকেননি তিনি। মাত্র পাঁচ বছর প্রেসিডেন্ট থাকার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য ১৯৯৩ সালে ম্যান্ডেলা এবং রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ককে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া গত চার দশকে আড়াইশ’র বেশি পুরস্কার দেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। কিংবদন্তি নেতাকে সম্মান জানিয়ে ২০১০ সালে জাতিসংঘ ১৮ জুলাইকে ম্যান্ডেলা দিবস ঘোষণা করে। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন মহাকালের মহানায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা।



« (পূর্বের খবর)