প্রধান মেনু

ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে আরো তেজদীপ্ত-বন্দি খালেদা জিয়া

স্যাঁতস্যাঁতে আলো-বাতাসহীন ঘরে বসবাসের কারণে কারবন্দি খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু মনোবল হারাননি একটুও। রাজনৈতিক দৃঢ়তা, কঠোর মনোবল এখনো অটুট তার। কারাগারে বসেও সব সময় তিনি দেশ, দেশের জনগণ, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ভাবছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী এখনো নীতির প্রশ্নে দৃঢ়ভাবে অবিচল। এখনো আগের মতোই তেজদীপ্ত। গণমানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে বজ্রের মতো কঠিন। তাকে পুরনো কারাগারের একটি নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে। তার উপর চলছে প্রচন্ড  মানসিক চাপ। তারপরও তিনি আপোষহীন। কারাগারে পরিবারের সদস্য, দলের শীর্ষ নেতা, আইনজীবী যারাই তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন তাদেরকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং ১৬ কোটি মানুষের অধিকার নিয়েই বেশিরভাগ কথা বলছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। কারবন্দি হওয়ার পর থেকে যারা কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গেছেন তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

গত ২০ জুনও পৃথকভাবে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন তার পরিবারের ৫ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এড. আহমেদ আজম খান। তারা জানান, অসুস্থতার মধ্যেও এমন দৃঢ়চেতা ও দেশপ্রেমী মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রবল আত্মবিশ্বাসী। তাকে কারাগারে প্রেরণ, অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করার পরও দমাতে পারেনি এতুটুকু। বরং কারাগার থেকেই তিনি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে নেতৃত্ব দিতে চান। এজন্য গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে যে আন্দোলন চলছে তা বেগবান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ওনি বাইরে থাকুন আর ভেতরে থাকুন ওনিই নেতৃত্ব দেবেন। খালেদা জিয়াকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার কারাগারে পাঠিয়েছে তার কোনকিছুতেই সফল হতে পারেনি বলে মনে করছে বিএনপি। দলে ভাঙন, খালেদা জিয়ার মনোবল ভেঙে দেয়া, নেতাকর্মীদের হতাশ করতে না পেরে এখন বিএনপি চেয়ারপারসনকে নানা প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার স্বজন ও দলটির একাধিক নেতা। তবে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোন কিছুতেই খালেদা জিয়া আপোষ করবেন না এমন বিশ্বাস দলটির নেতাকর্মীদের।

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে দেখা করেছেন পরিবারের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) আগের মতোই তেজদীপ্ত, আপোষহীন। তাকে দেখেছি বজ্রের মতো কঠিন। তাকে একটি নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে। তার উপর চলছে প্রচÐ মানসিক চাপ। তারপরও তিনি কোথাও মাথা নত করেননি। তিনি অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছেন। নির্যাতনে তার ছোট ছেলে মৃত্যু বরণ করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় বড় ছেলে তারেক রহমান পঙ্গু হয়েছেন। নয় বছর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। কিন্তু কখনো তিনি অন্যায়ের কাছে আপোষ করেননি। এবারও তিনি কোন হুমকি-ধামকির কাছে মাথা নত করবেন বলে মনে হয় না। এভাবে দীর্ঘকাল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কোন নেতানেত্রীর ত্যাগের নজীর নেই। দেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রের প্রতি তার এই ত্যাগ ও ভালবাসা বিরল উদাহরণ। যখন দেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র সঙ্কটে পড়েছেন তখনই তিনি এগিয়ে এসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও সকল বাধা, অত্যাচার-নির্যাতন উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন বেগবান করা নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়েছেন কারাগারে দেখা করে আসা বিএনপির এক নেতা।

খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার পর এড. আহমেদ আজম খান ইনকিলাবকে জানান, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে যে আন্দোলন চলছে তা বেগবান করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন এবং এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ওনি বাইরে থাকুন আর ভেতরে থাকুন ওনি নেতৃত্ব দেবেন। একইসঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেখে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করে আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটির নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছেন।

নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে চলমান ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে’ বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে সেখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও সরকারের কী ভূমিকা থাকে, তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে বলেছেন।
নিবার্চন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেছেন ওনাকে জেলে রেখে যে পাতানো নির্বাচন সরকার করতে চান সেটা কোনো প্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। ৫ জানুয়ারি যে ধরণের নির্বাচন হয়েছে ওই নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দেয়নি। ওনাকে জেলে রেখে একটা অর্থহীন নির্বাচন দেশের মানুষ দেখতে চান না।#