ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

উসমান গনি তুহীন, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ভালুকায় দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফসার বাহিনীর কাছে ১৯৭১’র এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনার আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। এতে আমার ভাইসহ অনেকে শহীদ হয়েছেন। ভালুকা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে (৮ডিসেম্বর) রোববার ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন ১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার পিতা মেজর আফসার উদ্দীন আহম্মেদ ৭১ এর ১৭ এপ্রিল ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে ভালুকায় মুক্তি বাহিনীর একটি গেরিলা দল গঠন করেন। আফসার উদ্দীনের ৮ সদস্যের দলটি পরবর্তীতে প্রায় সারে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনীতে রুপ নেয়। পরে এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ্ সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল’র সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, পৌর মেয়র ডাঃ মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ূম, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খান মিলন, মফিজ সাবের মেয়ে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন শিবলী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ভালুকা উপজেলা সভাপতি মোঃ সাদিকুর রহমান তালুকদার, মুক্তিযুদ্ধা খোরশেদ আলম জজ, সাবেক কমান্ডারর মতিউর রহমান, সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন খান মিলন, সাবেক কমান্ডার নাজিম উদ্দিন, সাবেক ডিপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান, আ’লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এড মো: শওকত আলী, সহকারী কমান্ডার আব্দুল মান্নান, সহকারী কমান্ডার হাজী বিল্লাল, সাবেক ডিপুটি কমান্ডার আবুল কালাম, কোম্পানী কমান্ডার মোঃ নুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মো: আশরাফ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, কোম্পানী কমান্ডার ফয়েজ উদ্দিন, সাবেক কমান্ডার জহিরুল ইসলাম ঢালী সহ অন্যান্যরা।
আরো উপস্থিত ছিলেন আফসার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জি: মাসুদ পারভেজ, উপপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি আহসান হাবীব মোহন, সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম জাকারিয়া, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী সভাপতি উসমান গনি তুহীন, সাধারন সম্পাদক ফজলে রা্ব্বী রানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ভালুকা ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক ও কাঁঠালী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো: শহিদুল্লা বিএসসি , আওয়ামী লীগ ও এর অংগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম যুদ্ধ ভাওয়ালিয়া বাজু যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে যুদ্ধের বর্ণনা শুনে উপস্থিত সকল শ্রোতা দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েন। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বুকে ধারণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তারা ভালুকায় সংগঠিত যুদ্ধ স্থানেইয় স্মৃতিসৌধ নির্মান এবং ভালুকার বড় বড় রাস্তা গুলো প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার নামে নাম করণের দাবী জানান। এর আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে উপজেলা চত্বর থেকে একটি র্যালি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এসে পরিষদ চত্বরে জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় র্যালী মুক্তিযুদ্ধে গঠিত আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদের মাজার জিয়ারত করে। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয় । সন্ধায় পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সারগাম কালচারাল একাডেমী, সৃষ্টি শিল্পকলা একাডেমী, গীত সংগীত একাডেমী, সপ্তসুর সংগীত বিদ্যালয়, সুরধবনী শিল্পী কল্যাণ গোষ্ঠী, সুরবীণা সাংস্কৃতিক সংস্থা, ভালুকা সংগীত বিদ্যালয়, সুরেশ সংগীত একাডেমী সহ বিভিন্ন শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।