প্রধান মেনু

ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী: কাজী ফিরোজ রশীদ

প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তান আমলের ২২ ধনী শ্রেণীর পরিবর্তে এখন ১২২ ধনী পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মোট সম্পদের ৮০ ভাগ ১২২ পরিবারের হাতে জিম্মি। বাকি ২০ ভাগের মালিক অন্যরা। অর্থমন্ত্রী এ ধনী শ্রেণীর জন্যই বাজেট দিয়েছেন, যারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিয়েছেন। উনি ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দিয়ে বাজেট দিয়েছেন, এটা হতে পারে না। এ আমরা মানতে পারি না।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু তো কোনো দিন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের কাছে মাথানত করেননি। আপনি কেন লুটেরাদের কাছে মাথানত করবেন? ব্যাংকে লুটপাটে অর্থমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় নীরব, বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব, অর্থ বিভাগ নীরব। ব্যাংকের ওপর মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। কারণ ব্যাংক এখন একটি পরিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। পারিবারিক ব্যাংক করে অবাধে লুটপাট চলছে। প্রস্তাবিত বাজেট ‘বিষ আর মধু’ একসঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বাজেটে রাজনৈতিক দর্শন নেই। তাই এ বাজেটকে ‘বাজেট’ বলা যায় না। অর্থমন্ত্রী যে দলের পক্ষ থেকে বাজেট দিয়েছেন, সেই দলের নীতি-আদর্শ, দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বাজেট দিয়েছেন। বাজেটে বিষ আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দেশের জনগণ তো বিষ আর মধু একসঙ্গে খান না।

তিনি অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, আপনি যদি এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চনা দেন তা হলে সমস্ত দুধ নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনি প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের টাকায় ব্যাংক লুটেরাদের ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী গোটা বাজেটের দর্শন নষ্ট করে দিয়েছেন। এ বাজেটে উনি ভেজাল মিশিয়েছেন।ফিরোজ রশিদ বলেন, আওয়ামী লীগ টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকায় বড় বড় প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলে অহংকারও বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এখন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অহংকার।

তিনি বলেন, প্রশাসনে এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের বাইরে প্রশাসনে কাউকে পাওয়া যাবে না। এরা কোথায় ছিল? কে তাদের আওয়ামী লীগ বানাইল? প্রশাসনে আওয়ামী লীগের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত বড় আওয়ামী লীগ এটার জন্য গবেষণা চলছে। কার নানার বাড়ির কাছে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ছিল, কার চাচার সঙ্গে কার বিয়ে হয়েছিল- এসব দিয়ে আওয়ামী লীগ বের করার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, আসল আওয়ামী লীগ নকল আওয়ামী লীগ বেছে নেয়া কঠিন হয়ে গেছে। তাদের দাপট এত বেশি যে সাধারণ মানুষকে তারা তোয়াক্কা করে না। ফিরোজ রশিদ বলেন, এখন রাস্তায় হাঁটতে গেলে কারও গায়ে ধাক্কা লাগলে বলে আমি আওয়ামী লীগ করি, পার্কে হাঁটতে গেলে বলে আমি আওয়ামী লীগ করি। এটা ভালো লক্ষণ নয়।

এদিকে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। নির্বাচনের পরিবেশকে মেঘাচ্ছন্ন করা হচ্ছে।আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক বিমানমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊ শৈ সিং, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, একেএমএ আউয়াল সাইদুর রহমান, বেগম খোরশেদ আরা হক।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, টানা ১০ বারের বাজেট দেয়ার বিরল সম্মান পৃথিবীর খুব কম অর্থমন্ত্রীরই রয়েছে। সামনে নির্বাচন। তাই বাজেটে জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ময়কর সাফল্য সারা বিশ্ব নেতারা স্বীকার করছেন, উন্নয়নের রোলমডেল হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, মাদক থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে যুব সমাজের সমূহ সর্বনাশ হবে। প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে যেভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছেন, ইনশাআল্লাহ মাদকের ছোবল থেকেও সেভাবে দেশকে রক্ষা করবেন। তিনি সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে সুদ না কমানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

ফারুক খান বলেন, দেশের জনগণ নয়, বিএনপি এখন বিদেশে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব নেতারা কেউই বিএনপির কথা শোনে না, কারণ তারা জানেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর আগামী নির্বাচন জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীর বাহাদুর উ শৈ সিং বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে।

কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছর এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছর- এ ৭ বছরে পার্বত্য শান্তি চুক্তির কোনো ধারা তারা বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তির ৫২টি ধারার মধ্যে ৪৮টিই বাস্তবায়ন করেছে। চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। এ মামলা তো বর্তমান সরকার দেয়নি। দুর্নীতি করবেন, আদালতের রায়ে জেলে যাবেন, এতে সরকারের দোষ কোথায়? মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাত নিয়ে আমরা সংসদ সদস্যরা এত কথা বলার পরও অর্থমন্ত্রী নিশ্চুপ তা আমাদের হতাশ করেছে।