বিশ্ব নদী দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে নিম্নাক্ত বাণী প্রদান করেছেন “বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উদ্যোগে ৩০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব নদী দিবস ২০১৮’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ পানি সম্পদ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি নদ-নদী, খাল- বিল, হাওর-বাঁওড় ও অন্যান্য জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল। দেশের অভ্যন্তরে ৪০৫টি নদ-নদী ও ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে আমাদের নদ-নদী ও জলাশয় ক্রমশ দূষণের কবলে নিপতিত হচ্ছে।
নাব্যতাহীনতা এবং নদী-সম্পদের অপব্যবহারের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এজন্য বর্তমানে আমাদের নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পানির অসীম গুরুত্ব বিবেচনা করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা সৃষ্টি করেন এবং নদ-নদী সুরক্ষায় নদী ড্রেজিংয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১১টি ড্রেজার ক্রয়ের নির্দেশ দেন। তিনি ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। জাতির পিতা আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ‘যৌথ নদী কমিশন- জেআরসি’ গঠন করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানির ন্যায্য অধিকার আদায় করেছে।
পানিসম্পদের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীসমূহের অববাহিকাভিত্তিক দেশসমূহের মধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমরা ‘ইধহমষধফবংয উবষঃধ চষধহ-২১০০’ শীর্ষক একটি শতবর্ষী ও সামগ্রিক কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। নদীর অবৈধ দখল, দূষণ, পরিবেশ দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌপরিবহণযোগ্য গড়ে তোলাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সময়োপযোগী ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধার দখল ও দূষণ থেকে মুক্ত করে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করি, দিবসটি পালনের মাধ্যমে নদী রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। নদী-সম্পদ, নদীর অবকাঠামো, পানি ও পরিবেশ সুরক্ষায় সক্রিয়ভাবেঅংশগ্রহণের জন্য আমি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমি ‘বিশ্ব নদী দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”