বিদেশের মাঠে বিড়ালই রইলো ভারত সংক্ষিপ্ত স্কোর: দক্ষিণ আফ্রিকা-২৮৬ ও ১৩০ ভারত-২০৯ ও ১৩৫ (৪২.৪ ওভার)
ঘরের মাঠে বাঘ আর বিদেশের মাটিতে বিড়াল এমন অপবাদ ঘাঁড়ে নিয়েই আফ্রিকার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ে ভারত। বোলারদের দাপটে তটস্থ ছিল উভয় দলের ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত জয় আফ্রিকানদের পেসারদের। তৃতীয় দিনে বৃষ্টি আঘাত না হানলে খেলার নিষ্পত্তি সেদিনই হয়ে যেতো। ২০৮ রানের লক্ষ্যটা কি বিরাট কোহলির ভারতের জন্য খুব বেশি বড় ছিল? কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে জয়ের দারুণ একটা মঞ্চই তো পেয়ে গিয়েছিল ভারত। সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩০ রানে বেঁধে রেখে লাঞ্চে গিয়ে খানিক আনন্দও কি উদযাপন করেননি কোহলিরা! করলে করতে পারেন।
কিন্তু সোমবার ম্যাচের চতুর্থ দিনে বোলারদের তৈরি করে দেয়া মঞ্চেও ফাগুন হাওয়াটা বইয়ে দিতে পারলেন না ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইন আপ অসহায়ভাবে ভেঙে পড়লো প্রোটিয়া পেস অ্যাটাকের সামনে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ভারনন ফিল্যান্ডের সামনে। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই ৬ উইকেটে নিলেন তিনি। ভারতকে গুড়িয়ে দিলেন ১৩৫ রানেই। দুই দল মিলিয়ে একদিনেই পড়লো ১৮ উইকেট। ২০ ওভার খেলে ২ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করা দক্ষিণ আফ্রিকা আজ সোমবার চতুর্থ দিনে ২১.২ ওভারে আরো ৬৫ রান যোগ করতেই হারায় বাকি ৮টি উইকেট। এরপর ২০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪২.৪ ওভারে ভারত হারায় তাদের ১০টি উইকেট। রান করতে পারে মাত্র ১৩৫। তাতে ৭২ রানের জয় দিয়ে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজ শুরু করেছে স্বাগতিকরা।
সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১৩০ রানেই গুড়িয়ে দিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ভারত। অবশ্য ক্রিকেটবোদ্ধারা জয়ের সম্ভাবনা দেখছিলেন উভয় দলের। ২০৮ রান তাড়া করে ভারতের মতো লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের দল জিততে পারবে না সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিল না। কিন্তু শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা বিভ্রান্ত করতে শুরু করে ভারতের টপ অর্ডারকে। শুরুতে দুইবার আউট হয়েও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ভারতের দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ৩০ রানের মাথায় শিখর ধাওয়ান আউট হওয়ার পর আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয়। একই রানে মুরালি বিজয়ও আউট হন। ৩৯ রানে চেতেশ্বর পূজারা আউট হওয়ার পর কোহলি ও রোহিত শর্মা জুটি বাঁধেন। চতুর্থ উইকেটে তারা দুজন ৩২ রান তুলে আশা জাগান। কিন্তু দলীয় ৭১ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২৮ রানে বিরাট কোহলি আউট হলে ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। ৭৬ রানে রোহিত শর্মা ১০ রান করে আউট হলে বিপর্যয়ে পড়ে যায় সফরকারীরা।
৭৭ রানের মাথায় প্রথম ইনিংসে ৯৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা হার্দিক পান্ডিয়া আউট হলে চোখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করে ভারতের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। ৮২ রানে ঋদ্ধিমান সাহার উইকেট হারানোর পর অষ্টম উইকেটে রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও ভুবনেশ্বর কুমার কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তারা দুজন সর্বোচ্চ ৪৯ রানের জুটি গড়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমান। ১৩১ রানের মাথায় অশ্বিন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৭ করে আউট হওয়ার পর ভারতের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ১৩৫ রানেই শেষ দুটি উইকেট হারিয়ে ৭২ রানের পরাজয় মেনে নেয় ভারত। বল হাতে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ গুড়িয়ে দেন ভারনন ফিলান্ডার। এই পেসার একাই নিয়েছেন ছয়-ছয়টি উইকেট। ১৫.৪ ওভার বল করে ৪ মেডেনসহ ৪২ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন তিনি। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন কাগিসু রাবাদা ও মরনে মরকেল। প্রথম ইনিংসে ৩টি ও পরের ইনিংসে ৬টি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারনন ফিলান্ডার।