প্রধান মেনু

বিকাশে যেভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা

মোঃমাহফুজুর রহমান বিপ্লব , ফরিদপুর প্রতিনিধি:  ‘হ্যালো, আমি বিকাশ থেকে বলছি। আপনার বিকাশে সাত হাজার টাকা ঢুকেছে। আপনার একাউন্টে একটু সমস্যা হয়েছে। এটি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি সঠিক তথ্য দিতে পারেন তবে আপনার একাউন্টটি সচল রাখা হবে।’ বিকাশ একাউন্টধারীদের নিকট এভাবে ফোন করেই প্রতারণা পর্ব শুরু করে প্রতারকেরা। এজন্য তারা গ্রাহকের সর্বশেষ লেনদেনের তথ্য জেনে গ্রাহককে সেগুলোও জানায়। এতে ওই গ্রাহকের একপ্রকার বিশ্বাস জন্মায় যে, ফোনটি বিকাশ অফিস থেকেই করা হয়েছে।
এরপর প্রতারকেরা গ্রাহকের ভোটার আইডি কার্ডের নাম, নম্বর, পিতার নাম জানতে চায়। বলা হয় আপনার নাম্বারে একটি ম্যাসেজ যাবে, পিন নাম্বারটি বলুন। এটুকুই প্রতারণার কৌশল। এরপর একটি ম্যাসেজ আসলো সাত হাজার টাকা ক্যাশ আউটের। ব্যাস্। যা করার তা এর মধ্যে করা শেষ প্রতারকের। গ্রাহককে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে এভাবেই তারা টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এজন্য তারা প্রথমেই বিকাশ এজন্টদের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিকাশ জমার ব্যালেন্স জেনে নেয় প্রথমে।
আবার অনেক সময় কোন টাকা না পাঠিয়েই একধরণের ম্যাসেজ পাঠানো হয় গ্রাহকের মোবাইলে। যাতে একটি নিদির্ষ্টি পরিমাণ টাকা ক্যাশ ইন হওয়ার বার্তা থাকে। এরপর মোবাইলে ফোন করে বিকাশ এজেন্ট পরিচয়ে বলা হয় যে, ভুলক্রমে আপনার বিকাশ নম্বরে এই টাকাটি চলে গেছে। দয়া করে এটি ফেরত দিলে অনেক উপকৃত হতাম। কথার জালে ব্যালেন্স না দেখে টাকা সেন্ড করে দিলেই গ্রাহক প্রতারকের খপ্পরে পরে যাবেন। এভাবেই নানা কৌশলে বিকাশ গ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকেরা। ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মধুখালীর কামারখালীতে এদের সংঘবদ্ধ একাধিক চক্রের সন্ধান মিলেছে। একের পর এক এসব চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও বিকাশ প্রতারণা বন্ধ হচ্ছে না।
ফরিদপুরে  বিকাশের নামে আরো ৪ প্রতারক গ্রেফতার: মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ এর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সাথে জড়িত চক্রের সক্রিয় সদস্য ৪ প্রতারককে আটক করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে তাদের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার জাঙ্গালপাশা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় আটককৃতদের নিকট হতে বিকাশ প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ৭টি বিভিন্ন ধরনের মোবাইল সেট, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ১০টি সীমকার্ড ও ২ টি রাউটার জব্দ করা হয়।আটককৃতরা হলো, ভাংগা উপজেলার জাঙ্গাল পাশা গ্রামের আক্কাস মীরের ছেলে রেজাউল মীর (৩৫), সামাদ মীরের ছেলে রনি মীর (২৫), লোকমান মীরের ছেলে সোহাগ মীর(২১) ও মিজানুর মীর(৩২)। এরা দীর্ঘদিনযাবত বিকাশ প্রতারনার সাথে লিপ্ত।
সিপিসি-২ ফরিদপুর র‌্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর নাজমুল আরেফিন পরাগ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা দীর্ঘদিন বিকাশ প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের নিকট হতে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো। এ বিষয়ে ফরিদপুর র‌্যাব ক্যাম্প গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গভীর অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্তির পর অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
র‌্যাব অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা বিকাশ প্রতারনার মাধ্যমে জনসাধারণের নিকট হতে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ভাংগা থানায় সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
তিনি জানান, বিকাশ প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন দুর্নীতিপরায়ণ মোবাইল সীম বিক্রেতার সাথে পরস্পর যোগসাজস করে ভূয়া নামে সীম কার্ড রেজিস্ট্রেশন করে প্রথমে। এরপর সেই সীমকার্ড ব্যবহার করে অসাধু ডিএসআর (বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বিকাশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত এ্যজেন্ট) দের মাধ্যমে ভূয়া বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলে।
প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুর্নীতিপরায়ণ ডিএসআর গণের নিকট থেকে অর্থের বিনিময়ে বিকাশ এজেন্টদের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে ওই সব ভূয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল সীমকার্ড ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সহজ সরল সাধারণ জনগনের নিকট নিজেদেরকে বিকাশ হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে কৌশলে তাদের বিকাশ পিন কোড জেনে নেয় এবং স্মার্ট ফোনে বিকাশ অ্যাপ্স ব্যবহার করে উক্ত সাধারণ লোকজনের বিকাশ এ্যাকাউন্ট হতে প্রতারনার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়