প্রধান মেনু

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যের ঘটনাগুলো আরো গবেষণা করে বের করা প্রয়োজন—-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা,, ৩১ শ্রাবণ (১৫ আগস্ট): পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার নেপথ্যের ঘটনাগুলো আরো গবেষণা করে বের করা প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, ’বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে কোন কোন দেশের কূটনীতিকরা ঢাকায় আনাগোনা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তারা কোন কোন দেশের লোকেরা কী বলেছেন সেগুলোও গবেষণা করে দেখা উচিত।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাসন্তীর কাহিনী প্রচার করা হয়েছিল। তখন বহু লোক দেশে আনাগোনা শুরু করে এবং একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আজকের বাংলাদেশেও সেরকম একটা অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়াস চলছে। ঐ সময়ের সাথে একটা সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অভাবনীয় অগ্রগতির পরেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে আমরা যে ধরনের অস্থিরতা দেখেছিলাম, মনে হয় এখনো সেই ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য কেউ কেউ উঠে পড়ে লেগেছে। সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের যে অপপ্রচার শুরু হয়েছে তা প্রতিহত করতে আমাদের আরো সক্রিয় হতে হবে।’ ৭৫ এর পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে- বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শ, একটি চেতনা, একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, একটি জাতিস্বত্তা সৃষ্টি করে গেছেন। শুধু একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরি করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটা সদ্য স্বাধীন দেশকে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন জাতির পিতা হিসাবে তিনি সেই সব কাজ করে গেছেন।’ ড. মোমেন বলেন, ‘যতগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ছিল, এই অল্প দিনে সবগুলোর সদস্য পদ বাংলাদেশ অর্জন করেছিল। এমনকি জাতিসংঘের সদস্য পদও বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়।’

ড. মোমেন আরো বলেন, ‘পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যারা এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতোগুলো রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল। শুধু স্বীকৃতি অর্জন নয়, মাত্র দু’মাসের মাথায় বন্ধুপ্রতিম ভারতের সৈন্যদের ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। খুব কম দেশেই এধরণের নিদর্শন আছে। এই জাতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু মাত্র ৯ মাসের মধ্যে একটি সুন্দর, শক্তিশালী সংবিধান দিয়ে গেছেন। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এতো অল্প সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়নের নজির আছে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে- শিক্ষা ক্ষেত্রে, শিল্প ক্ষেত্রে, কৃষি ক্ষেত্রে, সর্বক্ষেত্রেবঙ্গবন্ধু যে পরিকল্পনা তৈরি করে গেছেন আজ শেখ হাসিনা সেই পথ ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন ফলে দেশের উন্নয়ন এতো ত্বরান্বিত হয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সারাবিশ্বকে জানাতে আমাদের সবগুলো মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেছি। যেখান থেকে ঐ দেশে যারা বাঙালি আছেন তাদের নিয়ে, সেই দেশের থিংকট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে।’ ড. মোমেন বলেন, ‘বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে- বঙ্গবন্ধু মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকারের জন্য জীবনের ১৪টি বছর কারাবরণ করেছেন। বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অনন্য দেশ যেখানে গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, মানবাধিকারের জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে।’ এছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে সেটাও বিশ্ববাসীকে জানানো দরকার বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা আমীর হোসেন আমু, এমপি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু  হত্যাকাণ্ডের পর অনেকেই মনে করেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ড পরিবারকেন্দ্রিক। তবে পরে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়, এটা পরিবারকেন্দ্রিক নয়। এটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে।’ তিনি আরও বলেন, আমরা কোনোভাবেই মাঠের আন্দোলনকে ভয় পাই না। তবে বিএনপি মাঠের আন্দোলনে পরাজিত বলেই আজ বিদেশি শক্তির ওপর ভর করছে। বিদেশিদের কাছে ধর্না দিচ্ছে।’

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে আমাদের আগে সম্মান কী ছিল, আর এখন কী হয়েছে, সেটা সকলেই জানেন। এই সম্মান হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। আমাদের দেশ ছোট হলেও শেখ হাসিনা অনেক বড় নেতা।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছর পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি থাকা বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতার রূপকার। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম আমাদের মহান স্বাধীনতা।’

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস।

আলোচনা সভা শেষে ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ তাঁর পরিবারের শাহাদত বরণকারী সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ পালন করেছে। এগুলোর মধ্যে আজ (১৫ আগস্ট ২০২৩) ভোরে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণ, সকাল ১১ টায় ঢাকাস্থ বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং এরপরে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সাথে নিয়ে বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগষ্ট-এর শহিদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন।