প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে আশালতা ক্লিনিকের কার্যক্রম-প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ
নিজেস্ব প্রতিনিধি ॥ পাইকগাছায় প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাঁকা বাজারে চলছে আশালতা ক্লিনিক ও তুলি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। ক্লিনিকটির নিবন্ধন না থাকায় ইতোপূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নুন্যতম কোন কিছু অনুসরণ না করেই ক্লিনিকের কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ প্রতারিত ও হয়রানী হচ্ছে। গত শুক্রবারও এলাকার বিষপানে অসুস্থ্য এক গৃহবধূ সঠিক চিকিৎসার অভাবে আশালতা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
আশালতা ক্লিনিকের মালিকের ক্ষমতার উৎস্য কোথায় জানতে চাই এলাকাবাসী। ক্লিনিকটির বন্ধ রাখা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। সূত্রমতে, উপজেলার রাড়–লী ইউনিয়নের বাঁকা বাজারের প্রাণ কেন্দ্রেই দ্বিতল ভবনের যেনতেন কক্ষে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে আশালতা ক্লিনিকের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিবাশীষ মন্ডল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০১৬ সালের প্রণয়নকৃত তালিকায় ২৬ নং সিরিয়ালে রয়েছে আশালতা ক্লিনিক ও তুলি ডায়গনষ্টিক সেন্টারের নাম। তালিকায় লাইসেন্স সহ ক্লিনিকের বৈধতা সংক্রান্ত কোন তথ্যই নাই বলে উল্লেখ করা রয়েছে।
এভাবেই দীর্ঘদিন অবৈধ ক্লিনিকের ব্যবসা পরিচালনা করে আশালতা ক্লিনিকের মালিক সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করলে সুচতুর দেবাশীষ মন্ডল ক্লিনিক বন্ধ করে গা-ঢাকা দেয় বলে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ক্লিনিক পরিচালনার নুন্যতম বৈধ কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সিভিল সার্জন অফিস থেকে ইতোপূর্বে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের সাইফুল্লাহর স্ত্রী লাবণী বেগম বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরিবারের লোকজন তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আশালতা ক্লিনিকে ভর্তি করে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূ লাবনী মৃত্যুবরণ করে।
এ ব্যাপারে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে গেলে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ মন্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও কোন তথ্য দিতে অপরগতা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচারণ করে। এ দিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ গৃহবধূ লাবনীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে অথবা ক্লিনিকে সঠিক চিকিৎসা হলে সে বেঁচে যেত। অনেকের অভিযোগ ক্লিনিকের মালিক টাকার লোভে গৃহবধূ লাবনীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হস্তান্তর না করে এ ধরণের রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে চরম ভুল করেছে।
এর দায়ভার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে বহন করা উচিৎ এবং এ জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থার দাবী জানান সচেতন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানান, ক্লিনিকের মালিকের উচিৎ ছিল এ ধরণের রোগীকে তাৎক্ষনিকভাবে সরকারী হাসপাতালে পাঠানো। প্রাক্তন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা ডাঃ প্রভাত কুমার দাশ জানান, আমি দায়িত্বে থাকা কালীন আশালতা ক্লিনিকের বৈধ কোন কাগজপত্র ছিল না।
সিভিল সার্জন মহোদয়কে নিয়ে উক্ত ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ক্লিনিকের মালিক অত্যান্ত চালাক হওয়ায় আমরা সেখানে পৌছানোর আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে সে গা ঢাকা দেয়। এসব নানা অভিযোগে আমার চাকুরীর শেষ সময়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কার্যক্রম চালু করার কোন অনুমোদন হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মোঃ আব্দুল আউয়াল জানান, আশালতা ক্লিনিকের যদি কোন বৈধ কাগজপত্র না থেকে থাকে তা হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।