পরিবেশ সাংবাদিকতার সুরক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হবে—-তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
ঢাকা, ২১ বৈশাখ (৪ মে): পরিবেশ সাংবাদিকতার সুরক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
আজ রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘জলবায়ু রাজনীতির প্রেক্ষিত ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে তৃণমূলে, গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে যদি কোনো সাংবাদিক বা কোনো প্রতিবেদক স্থানীয় বা তথাকথিত প্রভাবশালী দ্বারা যদি কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েন, সেক্ষেত্রে সরকার সেই সাংবাদিকদের বা প্রতিবেদকদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন, সহযোগিতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এর কারণ জাতীয়ভাবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের অবস্থান পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পরিবেশকে বিপর্যয়ে ফেলার জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে কম দায়ী কিন্তু বড় শিকার। যে কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীর যেকোনো প্লাটফর্মে আমরা এ বিষয়ে উচ্চকন্ঠ থাকি এবং এখানে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় আমরা কাজ করি সরকার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম সবাইকে নিয়ে।
প্রতিমন্ত্রী যোগ করেন, দেশের ভেতরে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পরিবেশকে বিপর্যয়ের সম্মুখে ফেলেন এবং সেই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিক বা প্রতিবেদককে বিপদে পড়তে হয়, সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে এবং তাদের সুরক্ষা দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করবে। দরকার হলে এ বিষয়টি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হবে। কারণ সরকার মনে করে সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে যারা স্থানীয় পর্যায়ে বিচ্যুতি-ব্যত্যয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন তারা সরকারকে সহযোগিতা করছেন, দেশ ও জনগণকে সহযোগিতা করছেন।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা পরিবেশ-প্রতিবেশকে মাথায় রেখে টেকসই উন্নয়ন করতে চাই। আমরা যেমন পরিবেশের সুরক্ষা করতে চাই, তেমনি পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চালিয়ে রাখতে চাই, এগিয়ে যেতে চাই। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অনেকে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা করে থাকে। পরিবেশকে অনেক ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উন্নয়ন-অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা হয়, সেটা পেশাদার সাংবাদিকতা বলা যায় না।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, যারা সততা, সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে সাংবাদিকতা করবেন তাদের জন্য বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা থাকা দরকার। সাংবাদিকতার সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান দিয়ে এ ট্রাস্টের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সত্যিকার অর্থে যারা সাংবাদিকতা পেশার সাথে সম্পৃক্ত, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তাদের নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এ ধরনের আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া হবে। সাংবাদিকদের আর্থিক স্বাধীনতা তৈরির জন্য যে ধরনের পলিসি নেওয়া দরকার সেটা নিয়েও সরকার কাজ করছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর করা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থান প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরএসএফ-এর সূচক প্রকাশ ভালো উদ্যোগ। তবে তাদের মেথডোলজির মধ্যে অনেক দুর্বলতা আছে। আরএসএফ বিভিন্ন দেশে স্কোরিং করার ক্ষেত্রে যাদের মতামত নিচ্ছে, তাতে কিছু মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটছে। সেটা কোনভাবেই গোটা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিবেশের প্রতিফলন হচ্ছে না। এটা কোনো দেশের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। তবে একইসাথে এ ধরনের প্রতিবেদনে কোন সত্য বা আমাদের দুর্বলতা থাকলে সেটা বিবেচনায় নিয়ে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করা হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক ও ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এর সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন।
এদিকে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত অপর এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।
আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের অবস্থান মূলত পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে। শুধু পরিবেশ সুরক্ষা না, মুক্ত গণমাধ্যম, গণমধ্যমের সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আছে এবং থাকবে। তবে রাজনীতিতে যেমন অনেক ক্ষেত্রে অপরাজনীতি আছে, বিভিন্ন পেশায় যেমন কিছু নেতিবাচক দিক আছে, এমনি তথ্যের সাথেও আমরা অপতথ্যের বিস্তৃতি অনেক সময় দেখি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অপসংবাদিকতাও আমরা দেখি যে কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে। এটি কিন্তু শুধু আমি বলছি না আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরাও বলেন।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, গণমাধ্যম যত মুক্ত হবে, তারা স্বাধীনতা যত চর্চা করবে এবং অপতথ্যের বিপরীতে যত তথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে ততই সমাজে গুজব, অপপ্রচার এগুলো রোধ হবে। সরকার মনে করে গণমাধ্যম এবং পেশাদার সাংবাদিকতা সরকারের বন্ধু। তারা সরকারকে সহযোগিতা করেন।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য প্রদান করেন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি ও সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন।