ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে—-কৃষিমন্ত্রী
হবিগঞ্জ, ২৯ বৈশাখ (১২ মে): কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুস শহীদ বলেছেন, ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে হলে কৃষিকে রূপান্তরের মাধ্যমে স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। স্মার্ট কৃষির মাধ্যমে টেকসই কৃষি উৎপাদন, কৃষকের আয় বৃদ্ধি; জলবায়ু পরিবর্তনসহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং কৃষিকে লাভজনক করাই সরকারের উদ্দেশ্য। সেলক্ষ্যে বর্তমান সরকার কৃষিক্ষেত্রে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
আজ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি ইউনিয়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘খামারি’ অ্যাপের কার্যকারিতা যাচাইয়ে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের ফসল কর্তন ও কৃষক সমাবেশে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, আবাদি জমি কমছে, বিপরীতে বাড়ছে জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে বর্ধিত জনসংখ্যার বর্ধিত খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষি ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটাতে হবে। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে। ‘খামারি’ অ্যাপ এরকম একটি স্মার্ট প্রযুক্তি। ‘খামারি’ অ্যাপ ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন খরচ কমবে ও ফলন বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার প্রতিবছর সারে বিশাল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। ২০২৩ সালে সারে মোট ভরতুকি দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি। ‘খামারি’ অ্যাপ ব্যবহার করলে সারের সুষম প্রয়োগ হবে এবং সারের অপচয় রোধের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে অ্যাপসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এছাড়া কৃষি উপকরণ বিতরণ, সার, বীজসহ নানাভাবে কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকরা যদি অধিক মূল্য না পায় তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। এতে দেশে অধিক ফসল ফলানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ারের সভাপতিত্বে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির, হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ময়েজ উদ্দিন শরীফ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মলয় চৌধুরী, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরে মন্ত্রী হবিগঞ্জের জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পার্টনার প্রকল্পের আঞ্চলিক কর্মশালায় যোগ দেন।
এসময় মন্ত্রী সিলেট অঞ্চলের অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনতে নিবিড় ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন, অনাবাদি জমির ডেটাবেজ তৈরি করে কোন্ জমি কীভাবে চাষের আওতায় আনা যাবে, তার সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব ব্যাংক এবং ইফাদের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্প।