নির্বাচনকালীন সরকারের ফয়সালা চায় বিএনপি
রোডম্যাপ নয়, বিএনপি আগে নির্বাচনকালীন সরকারের ফয়সালা চায় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটা রোডম্যাপ দিয়েছে, ভালো কথা। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের সঙ্গে যে আলোচনা করতে চায় সে আলোচনায়ও আমরা রাজি আছি। আমরা কমিশনকে সহযোগিতা করবো। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হলে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।
বিএনপি সবার আগে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টির আগে ফয়সালা চায়। রমজানের পরই ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ রূপরেখা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
২০দলীয় জোটের শরিক জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে আলোচনা সভায় তিনি দলের এ অবস্থানের কথা জানান।
সিইসি কেএম নূরুল হুদার উদ্দেশ্যে ড. মোশাররফ বলেন, আপনি যতই আইন সংস্কার করেন না কেন, যতই ভালো ভালো কথা বলেন না কেন- প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন পরিচালিত হয় সরকারের কর্মকর্তাদের দিয়ে। জেলায় ডিসি-এসপি, উপজেলায় ইউএনও-থানার ওসি দিয়ে। সরকার থাকবে আওয়ামী লীগের আর এই কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ হবে- এটা কোনোদিন সম্ভব নয়।
এটা আমাদের কথা নয়, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা নিজেও এই কথা বলেছিলেন, কেন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। শেখ হাসিনা বা এই সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়নি, আগামীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন সেটা হবে না- এটা আমাদের স্পষ্ট কথা। নির্বাচনী আইনের সংস্কারের দাবির কথা তুলে ধরে ড. মোশাররফ বলেন,
আমরা দেখেছি- ওয়ান ইলেভেনের পরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার জন্য প্রায় ৭১-৭২টা নির্বাচনী এলাকা ইচ্ছামতো কাটছাঁট করে জনপ্রিয় নেতাদের পরাজিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সেইসব এলাকা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।
আর নির্বাচন কমিশন যে, ইভিএমের কথা বলছে বিএনপি সেটা বিশ্বাস করে না। বিএনপির পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে, ইভিএম আমরা বিশ্বাস করি না, এটা আমরা মানি না। পৃথিবীর অনেক দেশে ইভিএম ছিল, তা বাতিল করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বলবো, আপনারা ইভিএম নিয়ে চিন্তাও করবেন না। জনগণ নিজের ভোট নিজে দেবে, আগের পদ্ধতিতে ভোট হতে হবে।
ভারতীয় হাইকমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্য ড. মোশাররফ বলেন, আজকে পত্র-পত্রিকায় এসেছে, ভারতের হাইকমিশনার (হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা) বলেছেন, তারা আমাদের নির্বাচনে সহযোগিতা করবে। আমাদের প্রশ্ন কী ধরনের সাহায্য। তারা আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র, ভারতের সহযোগিতা আমরা চাই। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি যেভাবে ভারত সরকার, সরকারের পররাষ্ট্র সচিব একটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য সারা বিশ্বে ক্যাম্পিং করেছেন এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য সহযোগিতা করেছেন; সে ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা আমরা চাই না। তিনি বলেন, আমরা চাই- এদেশের জনগণ তাদের ইচ্ছা মতো ভোট দেবে। যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যদি আপনারা সহযোগিতা করতে চান, আমরা স্বাগত জানাই।
এই দেশে সকল দলের অংশগ্রহণে যাতে জনগণ সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে, যাতে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন হয় এ ব্যাপারে ভারত সহযোগিতা করবে-এই প্রত্যাশা আমরা করি। আর যদি কোনো একটি দলকে আবার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করেন, তাহলে জনগণ সেটা গ্রহণ করবে না।
আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাগপা সভাপতি প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দীন আহমেদ, ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মুর্তজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা ও জাগপা সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান।
জিয়াউর রহমান খান
সিনিয়র রিপোর্টার/জাতীয় গোয়েন্দা সংবাদ