প্রধান মেনু

নাচের শিক্ষক শোভন সাহা সবুজ নারি নির্যাতন মামলায় কারাগারে

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,১৫সেপ্টেম্বর ২০২০ঃ ঝিনাইদহ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাচের শিক্ষক শোভন সাহা অরফে শোভন আহমেদ সবুজের জামিনের আবেদন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সবুজ নারি নির্যাতন মামলায় ঝিনাইদহ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সবুজ ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের জগদিশ চন্দ্র সাহার (মন্টু) ছোট ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শোভন আহমেদ সবুজ ধর্মান্তরিত হয়ে ২০১২ সালের ০৫ মে সাবাবা ইসলাম রিয়াকে বিয়ে করে। পুর্ব ঘটনাঃ ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল। ২০০৮ সালের জানুয়ারির ১৮ তারিখে রিয়ার সাথে শোভন সাহার (সবুজ), পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে পরিচয় টা একটা সম্পর্কে গড়ায়। তারপর ২০১০ সালে সবুজ সুন্নাতে খাৎনা দিয়ে এবং এফিডেভিট করে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ২০১২ সালে মে মাসের ৫ তারিখে ইসলাম ধর্ম অনুসারে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

২০১২ সালের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে সবুজের পরিবারে বিয়ের ব্যাপারটা জানতে পারে। তারপর সবুজের পরিবার সবুজের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করে এবং সবুজ চাপ সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন সবুজ পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। এদিকে রিয়ার বয়স কম হওয়াতে সে সবুজের পরিবারের সাথে পেরে ওঠে না। এবং সবুজের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। এই ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে রিয়া মানসিক ও শারীরিক ভাবে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ঘটনাটি রিয়ার পরিবার জানার পরে মেয়েটিকে ঝিনাইদহের বাইরে আত্মীয়র বাসায় পাঠিয়ে দেয়। দীর্ঘ ৩ বছর থাকার পরে আবারও ঝিনাইদহতে ফিরে আসে রিয়া। কিছুদিন পরে রিয়ার ফিরে আসার কথা সবুজ জানতে পারে। জানার পর থেকেই রিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। পরিবার রিয়ার বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে সেগুলো কৌশলে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে সবুজ। এবং রিয়ার আগের বিয়ের কথা বলে বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করে এবং স্বামীর অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। সবুজের হাত থেকে রিয়া বেরোতে পারে না শেষমেষ।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে সবুজ আবারো পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং ৩০ ডিসেম্বরে ২০১৮ সালে আবারো পুনরায় বিবাহ সম্পন্ন করে দীর্ঘদিন সাংসারিক জীবন ভালই কাটছিল।এর মধ্যে সবুজ কে রিয়ার পরিবারে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। রিয়ার পরিবার সবুজের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং আন্তরিক ব্যবহারের কারণে সবুজকে মেনে নেয় এবং পর্যাপ্ত সম্মান দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। সবুজের পরিবার সব কিছুই জানতো। হঠাৎ করে রিয়ার কাছে সবুজ বড় অংকের একটা যৌতুক দাবী করে বসে। সেটা দিতে অস্বীকার করায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে রিয়াকে। তারপর থেকে সবুজ রিয়ার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটায় । রিয়া অনেক চেষ্টা করেও সবুজের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যার্থ হয়।

২০১৯ সালের ১৫ ই নভেম্বর থেকে সবুজ রিয়ার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখে না। লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে আপোষ মীমাংসার অনেক চেষ্টা করে রিয়া কিন্তু সবুজ এবং সবুজের পরিবার কোন কিছুতেই রাজি হয় না। অবশেষে বাধ্য হয়ে রিয়া ৩- ৩-২০২০ সালে লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে কোর্টে একটা যৌতুকের মামলা দায়ের করে এবং সাথে সাথে ঝিনাইদহ আদালত থেকে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হয়।

সবুজ ১১-০৩-২০২০ সালে সরাসরি কোর্টে হাজির হলে সকল শর্তে রাজি এমন একটা মুছলেখা দিয়ে সবুজকে বিচারিক আদালত তাকে জামিন দেয়।আদালতে দেওয়া সকল শর্ত ভঙ্গ করে সবুজ। দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও সবুজ কোন খবর নেয়নি রিয়ার। এবং চেষ্টা করেও সবুজের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেনি রিয়া। সবুজ ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমীর নাচের শিক্ষক হিসেবে আছেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এবং সেইসাথে কালিগঞ্জ একটি প্রাইভেট একাডেমীতেও শিক্ষকতা করেন।