প্রধান মেনু

দীর্ঘ ১৭ বছর পরে নিজ পরিবারের মাঝে ফিরলেন ভাঙ্গুড়ার আনোয়ার 

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ১৭ বছর পরে নিজ পরিবারের মাঝে ফিরলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার চৌবাড়ীয়া কলেজ পাড়া মহল্লার মৃতঃ আক্কাস আলী প্রমানিকের ছেলে। আনোয়ার হোসেন ছিলেন স্বাভাবিক একজন মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালোভাবেই জীবন যাপন করছিলেন তিনি। আনোয়ার হোসেন ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। নিয়মিত ব্যবসা ও সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন।
তিনি ২০০৬ সালের দিকে হটাৎ করে অন্যরকম আচরণ করতে থাকেন। স্বাভাবিক চলাফেরা না করে অদ্ভুদ কিছু আচরন করেন। নোংরা পরিবেশেই থাকতে পছন্দ করা শুরু করেন তিনি। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া, গোসলসহ সূস্থ মানুষের মত আচরণ না করে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী চলতে থাকেন। যে আচরণ গুলো পরিবারকে চিন্তত করে দেয়।
প্রথম অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা করা হলেও ঠিকমত ঔষধ না খাওয়ায় কোন উন্নতি হয়নি। দিনে দিনে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরবর্তীতে হটাৎ করে মাঝে মধ্যে এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যাওয়া শুরু করে আবার কিছুদিন পর ফিরে আসে। এভাবেই তিনি রাস্তা ঘাট, রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড সহ পথে পথে থাকতে শুরু করে।
জানা গেছে, ১৭ বছর আগে নিজ বাড়িতে তার দুই ছেলে ও স্ত্রীকে রেখে বাড়ি থেকে হঠাৎ বের হয়ে যান। দীর্ঘদিন তাকে বাড়ীতে নিতে চাইলেও আনোয়ার যেতেন না। হটাৎ করে তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘদিন এলাকার বাহিরে থাকায় সবাই ধরেই নিয়েছিলো হয়তো তিনি মারা যেতে পারেন। পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিছুদিন পূর্বে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন আনোয়ার। তারপর থেকেই পরিবারের সদস্যরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করেন।
অবশেষে গত, ১৮ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) দুপুরের দিকে তার বড় ছেলে ও এলাকার সুশীল সমাজের সহায়তায় আনোয়ার-কে বুঝিয়ে শুনিয়ে সেলুনে নাপিতের কাছে নিয়ে চুল, গোঁফ, কেটে গোসল করিয়ে মসজিদে নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করান। সে দিন থেকেই নিজে নিজেই আছর, মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন আনোয়ার।
এভাবেই তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এখন তিনি পরিবারের সাথে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন পর আনোয়ারের এমন পরিবর্তনের খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখতে নিজ বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক জনতা ও এলাকাবাসী।
আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে শামীম হোসেন মোহন দৈনিক বাংলাদেশ পত্রিকা-কে বলেন, ‘আমার বাবা ১৭ বছর আগে আমাদের পরিবারের সদস্যদের রেখে হঠাৎ করেই পথে পথে ঘুরতে থাকে এবং মাঝে মধ্যে অন্য কোথাও চলে যেতেন। কিছুদিন আগে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা ধারণা করেছিলাম হয়তো মারা গেছেন। আমরা বাবার জন্য মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করার চিন্তা করছিলাম। হটাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা বাবাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শিউলী খাতুন দীর্ঘদিন পরিবার ছাড়া তার স্বামীকে ফিরে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমার স্বামী এখন ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে। তাই আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শোকর জানাই।
আনোয়ার হোসেনের নিকটতম প্রতিবেশী ও ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহীম হোসেন ইমরান বলেন, অনেক চেষ্টা করেও তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এখন তিনি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করছি। তিনি পরিবারের মাঝে ফিরে আসায় আমরা এলাকাবাসী সবাই আনন্দিত এবং তার সু-স্বাস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।