প্রধান মেনু

ঝিনাইদহে বাসা ভাড়ার নামে যুবতী নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,০৪আগষ্ট ২০২০ঃ ঝিনাইদহকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতিসহ সমস্ত অপকর্ম থেকে রক্ষা করে একটি সুশীল সুন্দর ঝিনাইদহ গড়ে তোলার লক্ষে পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম এর নির্দেশে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান একের পর এক চোক ধাদালো কাজ দেখিয়ে ঝিনাইদহের মানুষকে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন। এরই ধারা বাহিকতায় মাদকের পাশাপাশি ঝিনাইদহের সচেতন মানুষের অনুরোধে অভিযান শুরু করেছেন নারীদের সম্মানকে জলাঞ্জলি দিয়ে যারা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত হয়েছেন তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমে ঘরে  ফেরাতে। এতেকরে যারা অপকর্মের সাথে লিপ্ত হয়ে গেছেন তাদের ভুল ভেঙ্গে সামনের দিনগুলিতে যেমন সুন্দর ভবিষ্যৎ ফিরে পাবে, তেমনি এদের শাস্তি
এবং পরিনতি দেখে নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

শহরে বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিছু ছাত্রীরা অসাধু দালালদের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে দেহব্যবসা। সম্পর্কের সুত্র ধরে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে তাদেরকে বাসায় ডেকে আনা হচ্ছে। এরপর সুকৌশলে দালালরা  তাদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ায় তারা সেদিকে ঝুঁকে পড়ছে। বাসা-বাড়ির দেহ ব্যবসায় ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সি নারীদের ব্যবহার করা হয়। এরা বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রী। এদের খদ্দের হচ্ছে বড়বড় ব্যবসায়ী বিভিন্ন বিত্তবান পরিবারের ছেলেরা। বিত্তবান মানুষরা আবাসিক এলাকার সুন্দরী পতিতাদের কাছে গেলে তাদের দালালরা তাদেরকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগও উঠেছে।

তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না চাইলে পতিতাদের সাথে ছবি তুলে পরিবারকে জানানো ও পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। তাই বাধ্য হয়ে সম্মান বাঁচাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়ে কোনমতে পালিয়ে আসে খদ্দেররা। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার পাড়ায় পাড়ায় জেনা ব্যাভিচারের পাশাপাশি যুবতী নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। মোবাইলে প্রেমের অভিনয় করে টাকা দাবী করা হচ্ছে। টাকা না দিলে যুবতীর সাথে নগ্ন করে ছবি উঠিয়ে ফাঁস করার হুমকী দেওয়া হচ্ছে। এ রকম একটি চক্রর ৭ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫ জন যুবতী নারী।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শৈলকূপা উপজেলার বাহির রয়েরা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে তন্মী (২৬), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের আড়মুখী গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে সুমী (২৪), নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের প্রফুল্ল কুমারের ছেলে শ্রী প্রদ্যুত কুমার বিশ্বাস (৩০), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মায়াধরপুর গ্রামের আফান উদ্দিনের ছেলে রাসেল হোসেন (২৫), কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামের খেলাফত মালিতার মেয়ে ইতি খাতুন (২২), ঝিনাইদহ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের ছোট কামারকুন্ডু গ্রামের সাগরের স্ত্রী লাবনী খাতুন (২০) ও নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামের মৃত হারুনের স্ত্রী সোহানা (২৫)।

সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাট গোপালপুর গ্রামের সমশের মন্ডলের ছেলে আনিচ মন্ডলের সাথে মোবাইলে পরিচয়ের সুত্র ধরে শৈলকূপা উপজেলার বাহির রয়েরা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে তন্মীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই মোতাবেক তন্বী আনিসের নিকট অসুস্থার কথা বলে ৫ হাজার টাকা চাই। আনিচ তাকে ২ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। তন্বী আনিচকে শহরের ব্যাপারীপাড়ায় আড়মুখী গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে সুমীর ভাড়া বাড়িতে আসতে বলে। আনিচ ৩১ শে জুলাই বিকালে ২ হাজার টাকা নিয়ে তন্নীর কথামত সূমীর ভাড়া বাসায় গিয়ে দরজায় নক করে। ভিতর থেকে সুমীর দরজা খুলে দিলে আনিচ এবং তন্নী বাসার ওয়েটিং রুমে বসে।

এ সময় নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের প্রফুল্ল কুমারের ছেলে শ্রী প্রদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস সুমীর পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আনিচকে ফাঁদে ফেলে দেয়। দাবী করে ৫০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে তন্বীর সাথে আনিচের উলঙ্গ ছবি তুলে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেবার হুমকী দেয়। এ বলার সাথে সাথে তন্নী কাপড় খুলে র্অধ নগ্ন হয়ে পড়ে। আনিস তাদেরকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে তন্নী, সুমী ও শ্রী প্রদ্যুৎ কুমার বশ্বিাস তাকে মারধর করে। আনিস বাধ্য হয়ে তার মায়ের কাছে ফোন করে ১৫ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলে। আনিসের মা হাটগোপালপুর বাজারে এসে তন্মীর বিকাশ নম্বরে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজন তন্নী, সুমী ও শ্রী প্রদ্যুৎ কুমারের কবল হতে আনিসকে উদ্ধার করে। ঘটনাটি পুলিশ জানতে পেরে ৩ জনকে গ্রেফতার করে।

এদিকে গত রোববার রাত ৯ টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের আলহেলা পাড়া থেকে রাসেল হোসেন, ইতি খাতুন ও লাবনী খাতুনকে গ্রেফতার করে। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছিল। এ ভাবে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় চলছে অসামাজিক কর্মকান্ড। যার বেশির ভাগ পুলিশের অগচোরে চলছে। এক শ্রেনীর টাউট বাটপার ও প্রতারক শ্রেনীর মানুষ এ সব অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকলেও তারা থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, এ ধরনের কাজকর্ম করে এক শ্রেণীর মানুষ যুব সমাজ কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন এই অভিযান অব্যহত থাকবে।