প্রধান মেনু

ঝিনাইদহে ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে সেনা সদস্য নিহত,২ জন গ্রেফতার চাপাতি উদ্ধার

ঝিনাইদহে ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে সাইফুল ইসলাম (৩৩) নামে এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মিজানুর রহমান ও আকিমুল হোসেন। রোববার ভোরে তাদের সদর উপজেলার আসাননগর ও সাধুহাটী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবী গ্রেফতারকৃতদের স্বীকোরোক্তি মোতাবেক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হাসুয়া ও চাপাতি উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাতেই নিহতর পিতা হাফিজ উদ্দীন হাবু অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসের মেডিকেল কোরের ল্যান্স কর্পোরাল সাইফুল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের হাফিজ উদ্দীন হাবুর ছেলে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের পুলিশ ফাড়ির সন্নিকটে হাওনঘাটা নামক স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ মধ্যরাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে আটক করেছে। রাতেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে নিহত পিতা হাফিজুদ্দীন বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন। নিহত সাইফুলের স্ত্রী শাম্মি আক্তার দেশের সেরা একজন এ্যথলেটিক হিসেবে বহু দেশে ক্রীড়া নৈপুন্য প্রদর্শন করে খ্যাতি অর্জন করেন।

নিহতর ছোট ভাই নৌবাহিনীর সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে তারা বদরগঞ্জ বাজার থেকে সাইফুলের শ্বশুর ছামছুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনজন এক মটরসাইকেলে নিজ গ্রামে ফিরছিলো। তারা বাড়ির কাছাকাছি হাওনঘাটা মাঠের মধ্যে পৌছালে ১০/১২ জনের একদল ডাকাত জাম গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে গতি রোধ করে। এ সময় ডাকাতদলের সাথে সাইফুলের বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তারা প্রথমে তাকে হাতে ও পরে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ প্রিন্স তাবে মৃত ঘোষনা করেন।

ডাঃ প্রিন্স জানান, অনেক আগেই রক্তক্ষরণ জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ডাকাতদের চিনে ফেলার কারণে সাইফুলকে হত্যা করা হতে পারে বলে তার ছোট ভাই নৌসদস্য মনিরুল দাবী করেন। ছোট ভাই মনিরুল বলেন,গত ১৭ আগষ্ট ১০ দিনের ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন সাইফুল। শনিবার সন্ধ্যা রাতে তারা বদরগঞ্জ বাজার থেকে সাইফুলের শ্বশুর ছামছুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনজন এক মটরসাইকেলে নিজ গ্রামে ফিরছিলো। বাড়ির কাছাকাছি সদর উপজেলার বংকিরা পুলিশ ক্যাম্প থেকে ঘটনাস্থল মাত্র সাতশ্#৩৯; গজ দূরে হাওনঘাটা মাঠের মধ্যে পৌঁছালে ওত পেতে থাকা ১০/১২ জনের একদল ডাকাত রাস্তার ওপরে গাছ ফেলে গতিরোধ করে হামলা করে। ডাকাতদলের হামলায় সাইফুলের হাত ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়। গ্রামবাসি সুত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই বেশ শান্ত স্বভাবের ছেলেটি যে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সেবা করবে সেটা ছিল গ্রামবাসির ধারনার বাইরে। একেবারেই নিরিবিলি। কোন ঝামেলার মধ্যে থাকতো না। বাড়িতে আসলে বংকিরা স্কুল মোড়ে সহপাঠীদের সাথেই সময় কাটতো পশ্চিমপাড়ার হাবুর ছেলে সাইফুল।তিন দিন পরই ঈদ।

পরিবার ও ঘর জুড়ে কতই না আনন্দ হবে। বাড়িতে মা ও স্ত্রী পথ চেয়ে বসে আছে। বাবা হাফিজদ্দীন হাবুও বংকিরার স্কুল মোড়ে দুই ছেলের অপেক্ষায়। ছেলেরা বাড়ি ফিরলেই খেতে বসবে। দুইটি সন্তান হামজা ও হুরাইরা পিতার অপেক্ষায় থেকে ঘুমিয়ে গেছে। হয়তো রোববার সকালে পিতার ক্ষত বিক্ষত দেহ দেখে চমকে উঠবে হামজা ও হুরাইরা।কোফিনে মোড়া লাশ, যা কোন দিন আর জাগবে না। এই শান্ত স্বভাবের ছেলেটি নির্মম ভাবে খুন হলো। ডাকাতরা তার কাছ থেকে কিছুই নেয়নি। সম্ভবত চিনে ফেলার কারনেই তাকে নিশানা বানানো হয়েছে। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সেনা সদস্য সাইফুল নিহত হবার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। তিন দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, দুর্বৃত্তদের ধরতে এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, রোববার ভোরের দিকে পুলিশ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। গ্রামের মানুষ দলে দলে সদর হাসপাতালে ভিড় করতে থাকে। যশোর সেনাসিবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিহত সাইফুলের স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন। এদিকে রোববার সকালে নিহত সেনা সদস্যের লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার যশোর সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে লাশ তার গ্রামে রবাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়। এদিকে সেনা সদস্য সাইফুলের লাশ বংকিরা গ্রামে পৌছালে তার পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসির মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।