প্রধান মেনু

ঝিনাইদহে গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের এক সময়ের দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্রের দিন কাটছে এখন রাস্তায় রাস্তায় !

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ১৮ এপ্রিল ২০২১ঃ অভিজাত পরিবারে জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে দিয়ে আব্দুল গাফফার।কৈশর যৌবনে ছিলেন দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্র। কর্মজীবনে পেয়েছিলেন “অংকের যাদুকর” খেতাব বাহ!কঠিন ও জটিল অংকের সহজ সমাধান দিতেন তিনি।ঢাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেছেন সুনামের সাথে। নিজ এলাকায় গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের পন্ডিত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। বীজগনিতের উৎপাদক বিশ্লেষণের ফর্মুলা আবিষ্কার করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন এই আব্দুল গাফ্ধসঢ়;ফারের দিন কাটে এখন রাস্তায় রাস্তায় !

বয়স সত্তরের কাছাকাছি প্রায় তবে গায়ে দুর্গন্ধময় ময়লা কাপড়, মাথা ভর্তি আউলা ঝাউলা চুল, আপন মনে হেটে চলেন পথ দিয়ে। এমন একজন মেধাবী শিক্ষকের করুণ পরিণতি দেখে পরিচিতরা হতবাক হলেও তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব কেও নেন নাই,আসলে কেউ কারো না ! অথচ তার নিপুণ মেধায় গড়া কত ছাত্র প্রশাসনের উচ্চ পদে কর্মরত বাহ!তারা কি খোজ রাখেনা ? ময়লাযুক্ত ছেড়া জামা কাপড় ও পাগলবেশি আব্দুল গফফার বছরের পর বছর ঘুরছেন এই ভাবে পথে পথে।

মসজিদ, স্কুলঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বারান্দা এখন এই জনপ্রিয় শিক্ষকের বসবাসের জায়গা! তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষক আব্দুল গাফফার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের কাজী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।এলাকায় তাদের পরিবার অভিজাত ও সমভ্রান্ত হিসেবে পরিচিত।আব্দুল গাফফারের মেজ ভাই কাজী আব্দুল গনি র্নিবাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব হিসেবে অবসর নিয়েছেন। ছোট ভাই কাজী আব্দুল কাদের ঢাকায় আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। তবে তাদের কোন ভাইয়ের সংসার জীবন বা সন্তানাদি নেই !এ এক র্নিমম পরিহাস।

গ্রামবাসি সুত্রে জানা গেছে, মাত্র ১০ বছর বয়সে পিতৃহারা হন আব্দুল গাফফার। পিতৃহীন তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে হতাশায় পড়েন সদ্য বিধবা মা কাজী বদরুন্নেছা। তাই সন্তানদের নিয়ে বদরুন্নেছা চলে আসেন মহেশপুর পৌর এলাকার জলিলপুর মোল্লা পাড়ার পিতার বাড়িতে। নানা নুরুদ্দীন আহম্মেদের বাড়িতে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন আব্দুল গাফফার। বেড়ে ওঠেন তুখোড় মেধাবী ছাত্র হিসেবে। এলাকায় তার মেধার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে।

মা বদরুন্নেছার দ্বিতীয় বিয়ে হয় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি ও তৃতীয় বিয়ে হয় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ছাউলিয়া গ্রামে। মা বদরুন্নেছার সন্তানদের অনেকেই এখনো মহেশপুরের জলিলপুরের নানা বাড়িতে বসবাস করেন। এদিকে আব্দুল গাফ্ধসঢ়;ফার জগন্নাথ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএসসি ও এমএসসি পাশ করে ঢাকার মানিক নগর ও পরে মতিঝিল মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিয়ে করেন নড়াইলে। তার স্ত্রীও ছিলেন এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক।অজ্ঞাত কারণে আর সংসার করা হয়নি।

৩০ বছর ঢাকায় বসবাসের পর তিনি মহেশপুর চলে আসেন।তবে এ সব বিষয়ে আব্দুল গাফফারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। আমার সময় খুবই কম।আব্দুল গাফফার এ প্রতিবেদককে বলেছেন, তিনি জমিজমা নিয়ে শংকার মধ্যে আছেন। তার ভাইয়েরা জমি লিখে নিতে চাই। খালিশপুরের গোয়ালহুদা গ্রামের সিমেন্ট ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, গত ১০ বছর আব্দুল গাফফার স্যার তার বাড়িতে থাকেন। তিনি দিনে একবার খান। প্রায় সময় রোজা থাকেন। নিয়মিত ছাত্র পড়ান কিন্তু কোন টাকা পয়সা নেন না।

তবে কম কথা বলেন। অসুস্থ হলে প্রিয় ছাত্ররা তাকে দেখাশোনা করেন। ওষুধ কিনে দেন। বর্তমান শামিম রেজা নামে এক ছাত্র আব্দুল গাফফারের দেখভাল করছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা শহরে আব্দুল গাফফারের মূল্যবান জমি রয়েছে। এই জমি নিতে চান ভাইয়েরা। এদিকে মাতৃকুল ও পিতৃকুল মিলে অনেক জমি পেয়েছেন তিনি। স্ত্রী সন্তান না থাকায় এ সব জমি ভাইয়েরা রেজিষ্ট্রি করে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এ চিন্তায় তিনি ব্যাকুল। তবে এলাকাবাসির ভাষ্যমতে তিনি পাগল বা মস্তিস্ক বিকৃত নয়। আগে তিনি গোসল করে পরিপাটি পোশাকে চলাফেরা করতেন।

গত এক বছর আব্দুল গাফফার গোসল করেন না। গাফফারের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী (মায়ের তৃতীয় পক্ষ) ছিরবা আক্তার ঝর্ণা শুক্রবার দুপুরে এ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছিলেন তার ভাসুর ইচ্ছা করেই এমন করে থাকেন। কারণ জমিজমা নিয়ে তিনি বেশি চিন্তা করেন।এছাড়া তার শ্বাশুড়ি বদরুন্নেছার জমিও প্রথম পক্ষের ৩ ভাই লিখে নিয়েছেন।ফলে শ্বাশুড়ির আরো দুই পক্ষের ৬ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে ছিরবা আক্তার ঝর্ণা দাবী করেন।ঝর্ণার ভাষ্যমতে তার শ্বাশুড়ি বদরুন্নেছা বেঁচে থাকাবস্থায় মাঝেমধ্যে আব্দুল গাফফার বাড়িতে আসতেন।

২০০৬ সালে ২৭ মার্চ শ্বাশুড়ি মারা গেলে আর আসেন না। এখন মসজিদ ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।এলাকা বাসি জানান, তার নিপুণ মেধায় গড়া কত ছাত্র প্রশাসনের উচ্চ পদে কর্মরত তাদের মধ্যে কেউ আগায়ে আসলে আব্দুল গাফফারকে হয়তো ভালো করা সম্ভাব হবে ।