জোড় পূর্বক বিদ্যালয় স্থানান্তর করার অভিযোগ

মোঃজাহাঙ্গীর আলম রিকো, হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় জোড় পূর্বক কোন কারন ছাড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এমনকি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো নতুন বই পায়নি। ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক না যাওয়ায় পাঠদান ব্যহতসহ অনিশ্চিতায়র মুখে পড়েছে কোমলমতি শিশু
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত। এতে করে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা চরের পশ্চিম হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় ০৫জানুয়ারী লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি), হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) এর নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসি ও অভিভাবকরা।
জানা গেছে, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। নদী ভাঙ্গনের কারনে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় বার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি
পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। আর তখন থেকে সেখানেই পাঠদান চলছে। এমন অবস্থায় ২০২০ সালের প্রথম দিনে সারা দেশের ন্যায় ওই বিদ্যালয়েও নতুন বই বিতরণ করা হয়। কিন্তু ওই দিন শুধু মাত্র চারজন শিক্ষার্থীকে নতুন বই দেওয়া হয়। এরপর প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টার বসে থেকে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু বিদ্যালয়ে শিক্ষকও আসে না, শিক্ষার্থীদের বইও দেওয়া হয় না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা আর ছুটো ছুটি করে সময় পাড় করছে। তবে কোন শিক্ষকের দেখা মেলেনি। শ্রেনী কক্ষে বই ছাড়াই বসে আছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, ১জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক শুধু মাত্র চারজনকে নতুন বই দিয়ে চলে যান। এরপর আর তাদের দেখাও মেলে নাই। তাই প্রতিদিন নতুন বইয়ের জন্য বিদ্যালয় আসি আর চলে যায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিচালনা কমিটির সদস্যরা কোন কারণ ছাড়াই বিদ্যালয়টি এখান থেকে অন্য স্থানে সরানোর পায়তারা করেছে। তবে স্থানীয়দের বাধায় কিছু আসবাবপত্র ছাড়া আর কোন কিছু নিয়ে যেতে পারেনি। আর পরিচালনা কমিটির সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষকরাও বিদ্যালয় আসে না। তারা পরিচালনা কমিটিরি নির্ধারিত স্থানে টিনের চালায় তৈরি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী ছাড়াই বসে থেকে সময় পাড় করছেন। এ বিষয়ে পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি আমি স্থান্তর করি নাই।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি পাটিকাপাড়া ৬নং ওয়ার্ড থেকে ৭নং ওয়ার্ডে বিদ্যালয়টি নিয়ে নির্মাণ করছেন। এখানে আমার করার কিছু নাই। কমিটির লোকজন যেখানে বিদ্যালয় নিয়ে যাবেন আমি সেখানেই যাবো। এ বিষয়ে পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আয়শা বেগম বলেন, ওই এলাকায় তেমন কোন শিক্ষার্থী নেই। এছাড়া এতো দূরে আসতে কষ্ট হয় শিক্ষকদের। তাই আমরা বিদ্যালয়টি সেখান থেকে এখানে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিঠুন বর্মন জানান, আমরা বিষয়টি অবগত আছি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, কোন কারন ছাড়াই বিদ্যালয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিতর দিকে চলে যাচ্ছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।