প্রধান মেনু

জীবন যুদ্ধে হার না মানা প্রতিবন্ধী নুরজাহানের গল্প

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী প্রতিনিধিঃ গৃহবধু নুরজাহানের জীবনের শুরুটা খুব একটা সুখের ছিলনা। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে তাদের সংসারে আসে ৩ মেয়ে ১ ছেলে। কিছুদিন পর সে স্বামীও তাকে ছেড়ে চলে যায়।এভাবে কষ্টের জিবন চলতে থাকে বিধবা নুর জাহানের। তবে বেশীদিন এ কষ্ট করতে হয়নি তার। ছাগল পালনই তার জিবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ৯ লক্ষ টাকার ছাগল বিক্রয় করেছেন।

নুরজাহান ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে তার সন্তানদের বড় করেছেন, বিয়েও দিয়েছেন। এমনকি তার নাতি নাতনিদের লেখাপড়া ও বিয়ে সম্পন্ন করেছেন এই ছাগল বিক্রয় করে। বর্তমানে নুরজাহান বেগমের খোয়াড়ে রয়েছে ৫২টি ছাগল । মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের ফিল্ড পাড়ার জীবন শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী নুরজাহান। তাঁর ডান হাতটি সম্পুর্ণ অকেজো। পরপর দুজন স্বামি চলে যাওয়া আর সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সন্তানদের নিয়ে সংসারে অবহেলার পাত্রে পরিণত হন।

‘কিন্তু জীবনতো আর থেমে থাকেনা, সন্তানদের বড় করতে হবে’ এমন চিন্তায় প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি কাজ করত। তাতে তিনি কোনো রকমে খাবার ব্যাবস্থা হলেও সন্তানদের জন্য কিছুই করতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে ভাবলেন, তিন বেলা তিন মুঠো চাল জমা করবেন। মাস দেড়েক জমা করা মুষ্ঠির চাউল বিক্রি করে প্রথমে একটি মুরগি ক্রয় করেন। কয়েক মাস পর বেশ কিছু মুরগী বিক্রি করে তিনি একটি ধাড়ি (নারী) ছাগল ক্রয় করেন এবং কাজের ফাঁকে তিনি তা লালন-পালন করতে থাকেন। ওই ছাগল থেকে আবারো দুটি ছাগী বাচ্চা জন্ম নেয়।

এই তিন ছাগল থেকেই তার মাথায় আসে ছাগল পালনের। প্রথমে অনেকেই অনাগ্রহী করে তুলতো। তার পরও ছাগল পালন ছাড়েননি নুরজাহান। বছর সাতেকের মধ্যে প্রায় নয়লক্ষ টাকার ছাগল বিক্রয় করেছেন। সে টাকা দিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন বিয়েও দিয়েছেন এমনকি তার নাতি নাতনিদের লেখাপড়া ও বিয়ে সম্পন্ন করেছেন এই ছাগল বিক্রয় করে। নুরজাহান বেগম জানান, নিজের জমি নেই। রাস্তার ধারে অথবা মাঠের পরিত্যক্ত জমিতে ছাগল চরানো হয়। বাজার থেকে কোন দামী খাবারও কিনতে হয়না তার। প্রতি মাসে চার থেকে ছয়টা নতুন অতিথি যোগ হয় ছাগলের পালে। বর্তমানে নুরজাহান বেগমের খোয়াড়ে রয়েছে ৫২টি ছাগল। তিনি জানান জিবন যুদ্ধে আমি জয়ী।