চিকিৎসক ধর্মঘট স্থগিত
চিকিৎসক ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভিড় করেন রোগীরা রোগী ও স্বজনদের প্রায় ২৪ ঘণ্টা জিম্মি অবস্থায় রাখার পর চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান সমিতি এ ঘোষণা দিয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘প্রশাসন ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের নেতাদের পরামর্শে ধর্মঘট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন থেকে সব হাসপাতাল খোলা থাকবে। রোগীদের অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’ এর আগে সকালে একাধিক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ধর্মঘট ডাকার কারণে নগরের প্রায় সব হাসপাতাল ল্যাবে অভিন্ন ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এসব সেবা কেন্দ্রের প্রবেশপথও বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ৫০৬টি বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নিরূপণী কেন্দ্রে এ ধর্মঘট শুরু করা হয়েছিল। এ অবস্থায় প্রধান সেবা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ দুই হাসপাতালে ছিল রোগীর উপচে পড়া ভিড়। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার বিকাল ৫টা থেকে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের ৪০টি ওয়ার্ডের ১ হাজার ৩১৩ শয্যায় প্রায় ৪ হাজার ৫০০ রোগী ভর্তি হন। সাধারণ সময়ে এ সংখ্যা থাকে ২ হাজার ২০০ থেকে ৪০০।
জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিলেও রবিবার বিকাল থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ রোগী সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে গতকালই এসেছেন প্রায় ৫০০ রোগী। চমেক হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. বহ্নি চক্রবর্তী বলেন, আউটডোর-ইনডোর মিলে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ রোগী গতকাল দুপুর পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন। সাধারণ সময়ে নেন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার রোগী। সকালে চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, ৭০ শয্যার ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল দ্বিগুণ। শয্যাসংকুলান না হওয়ায় ফ্লোরে বেড দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ বিভাগে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০০ শিশু ভর্তি হয়। শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেড় বছরের শিশু সন্তানকে পটিয়া থেকে আনা মা ফাতেমাতুজ জাহান বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় কন্যাসন্তানকে নিয়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে যাই। গিয়ে দেখি ওই হাসপাতাল বন্ধ। তাই এখন চমেক হাসপাতালে এসেছি। এখানে শয্যা না পাওয়ায় ফ্লোরে রয়েছি।’
সাতকানিয়া উপজেলা থেকে আসা রোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কষ্টে একজন চিকিৎসকের সিরিয়াল নম্বর নিয়েছি। গিয়ে দেখি চেম্বার বন্ধ। আবার কীভাবে যে নম্বর নেব সে চিন্তায় আছি।’ চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, রোগী বাড়লেও সবার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো রোগীকে সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। আমরা বলব, সবাই যেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে আসেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের অন্যতম সরকারি সেবা কেন্দ্র জেনারেল হাসপাতালেও ছিল রোগীর চাপ।
গত রবিবার বহির্বিভাগ থেকে সেবা নেন মোট ৭১৯ জন, গতকাল দুপুর পর্যন্ত নেন ১ হাজার ২৭ জন। একইভাবে জরুরি বিভাগেও রবিবারের চেয়ে গতকাল দ্বিগুণ রোগী সেবা গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, গত রবিবার দুপুরে ত্রুটিপূর্ণ লাইসেন্সে অদক্ষ-অনভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স দ্বারা পরিচালিত ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ ও সিএসসিআর হাসপাতালকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। এর প্রতিবাদে বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান সমিতি হঠাৎই চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। রোগীদের জিম্মি করে হাসপাতাল মালিকদের এ ধর্মঘট নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।
তা ছাড়া গত ২৮ জুন সাংবাদিক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা খানকে গলায় ব্যথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়। এরপর রুবেল খান ভুল চিকিৎসায় মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সিভিল সার্জন থেকে পৃথক দুটি কমিটি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্তে ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি অনিয়ম-ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। তা ছাড়া সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটিও কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা বলে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করে।