গোদাগাড়ীতে ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির সহযোগিতায় উন্নত হচ্ছে আদিবাসীদের জীবনযাত্রায় মান

মোঃ মাসুদ আলম গোদাগাড়ী, রাজশাহী: বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী সাঁওতাল। তারা সান্তাল, সান্তালি, পাহাড়ী, হোর, হর ইত্যাদি নামেও পরিচিত। মূলত বাংলাদেশে রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া জেলায় তাদের বাস। এ ছাড়াও কিছু সাঁওতালদের বাস মপার্বত্য চট্টগ্রাম, পাবনা, যশোর ও খুলনায়। তারা মূলত বাংলাদেশ অংশে আসেন ১৮৪০ থেকে ১৯৪০ সাল, ও ১৯৯১ আদমশুমারি অনুযায়ী সাঁওতালদের সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় কাকনহাট পৌরসভা, দেওপাড়া, গোগ্রাম, রিশিকুল, পাকড়ী, মাটিকাটাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ডে বেশ কিছু সাঁওতাল রয়েছে। তাদের জীবন মান উন্নত ছিল না , তারা শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিল। তাদের পুরুষ মহিলারা কঠোর পরিশ্রমী, রাজশাহী ১ আসনের এমপি সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী সাঁওতালদের শিক্ষাউপবৃত্তি, চাকুরীর ব্যবস্থা, বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাসহ সুযোগ সুবিধা দেওয়ায় তাদের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারা দিনে দিনে সচেতন হচ্ছে, তাদেরকে এখন ফাঁকী দিয়ে জমি জায়গা লিখে নিতে পাচ্ছেন না।
এখন আদিবাসীদের নিকট জনপ্রিয়, সুপরিচিত নাম ওমর ফারুক চৌধুরী। কেন না তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীতে এমপি মহোদয় অংশ গ্রহন করেন, তাদের সুযোগ সুবিধার জন্য সবসময় চেষ্টা করেন। এর পূর্বে কোন এমপি, মন্ত্রী তাদের জন্য একাজটি করেন নি। সাঁওতালরা বিশ্বাস করেন আদি মানব-মানবী পিলচু বুড়ো ও পিলচো বুড়ির সাত জোড়া সন্তান থেকেই তাদের উদ্ভব। এ জন্য তারা সাতটি গোত্রে বিভক্ত। এগুলো হলো হাঁসদা, সরেন, টুডু, কিসকু, মুর্মু, মাণ্ডি, বাস্কে বেসরা। তারা সূর্যকে মূলত মেনে চলে। সূর্যকে সিংবঙ্গা, মারাং বুরু বলেন। তাদের ধর্মের নাম সারি ধরম। আর গরুকে খুবই যত্নের সঙ্গে লালন পালন করেন। তারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন। এ ছাড়া তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা মুণ্ডা। এই ভাষাটি অক্ষরহীন।
সাঁওতালদের শরীরের গড়ন মধ্যম আকৃতির হয়। ত্বকের রং গাঢ়। পুরু ঠোঁট, চ্যাপ্টা নাক, কোকড়ানো চুল। সুঠাম দেহের অধিকারী। তাদের ঘরগুলো মাটির হয় সাধারণত। তারা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পুরুষরা আগে সাদা থান পরলেও এখন পরেন প্যন্ট, শার্ট, লুঙ্গি, ধুতি। আর গামছা তাদের সঙ্গী। আর নারীরা এখন শাড়ি পরেন। পুরুষদের হাতে লক্ষণীয় উল্কির ছাপ। আর নারীরা বালা, ঝুমকা, আংটি, মল, হাঁসুলি ইত্যাদি ব্যবহার করেন। মৃতদেহ দাহের প্রথা থাকলেও এখন তারা কবর দিয়ে থাকেন। বাঙালি খাবারের পাশাপাশি তারা ঝিনুক, শামুক, কাঁকড়া, শূকর, মুরগি, খরগোশের মাংস, ইঁদুর, বেজি ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। শিকারী জাতি হিসেবে পরিচিত সাঁওতালরা। বর্তমানে তাদের প্রধান আয় কৃষি। এ ছাড়াও শ্রমিক হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আর তাদের বাঁশের কাজে রয়েছে আলাদা খ্যাতি। সাঁওতালরা পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তিতে থাকে না মেয়েদের কোনো অধিকার। তবে সম্পত্তি বণ্টনের সময় সাধ্য থাকলে পিতা মেয়েদের একটি করে গাভী উপহার দিয়ে থাকেন। আর ছেলে সন্তান না থাকলে ভাইয়েরা তার মালিক হন। সাঁওতালরা বেশ উৎসবপ্রিয়। তাদের প্রধান উৎসব বাহা। বসন্তের শুরুতে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এই বাহা’তেই বসে বিয়ের হাট ফাল্গুনে পালন করেন স্যালসেই, চৈত্রে বোঙ্গাবোঙ্গি, বৈশাখে হোম, আশ্বিনে দিবি, পৌষ শেষে সোহরাই উৎসব পালিত হয়। এ ছাড়াও ভাণ্ডান, ফতে, বারনি তারা বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করে থাকেন। তাদের প্রধান বাদ্যযন্ত্র ঢোল। এ ছাড়াও দোতারা, কয়েক প্রকারের বাঁশি, মেগো, খুমুর, ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।
আর হাঁড়ির গায়ে পয়সা দিয়েও অপূর্ব এক সুর তোলেন তারা। আর বাড়িতে ছবি আঁকাও একটি শিল্প তাদের। সাঁওতালদের গর্ব ৩০শে জুন ১৮৫৫। এই দিনে বৃটিশদের সঙ্গে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তারা। এটি জুন বিদ্রোহ বা ‘হুল’ নামে পরিচিত। মাটিকাটা ইউনিয়নের ভাজনপুর এলাকার উভয়পদ বলেন, কৃষি শ্রমিক হিসেবে পুরুষদের দেয়া হয় দৈনিক মৌসুম ভেদে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। মহিলাদের পারিশ্রমিক কিছুটা কম দয়া হয়। তিনি বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি সাহেব আমাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা বৃত্তি, চাকুরী ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা করায় আমাদের মাঝে উচ্চ শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদেরকে আর পিছিয়ে পড়া জনগৌষ্টি বলতে পারেনা। আমাদের মাঝে থেকে রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়ায় জনপ্রতিনিধিও হচ্ছেন।
একই মন্তব্য করেন দুলু দেব, দিলিপ দেব। সাঁওতালদের সন্তানরা দিনের বেলা শামুক, মাছ ধরে থাকেন। কিন্তু দিনকে দিন তার সংখ্যাও কমে আসছে। এখন সারাদিন খুঁজেও তারা মেলাতে পারে না শামুক। আর এই বাচ্চাদের অধিকাংশের গণ্ডি প্রাথমিক পর্যন্তই। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে একই স্কুলে গেলেও পড়তে হয় নানা সমস্যায়। সাঁওতালদের জীবনযাপন অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। নেই স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। রোগ লেগেই রয়েছে । আর কুসংস্কারে জর্জরিত তারা। এখনো তাদের প্রধান চিকিৎসা তাবিজ কবজ। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগে আগে আসতে থাকেন তারা। সারা দিনের আয়ের টাকা দিয়ে কিনে আনা চাল-ডালই তাদের ভরসা। নারীরা প্রস্তুতি নেন রান্নার। অধিকাংশের ঘরে তা সীমাবদ্ধ একটি লাল বাতিতেই। সাবার বাড়ীতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পরে নি।
তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। পরিশ্রান্ত দেহ বিছানায় বিলিয়ে দিয়েই ঘুম। পরদিন ফের সকালে যেতে হবে কাজে। গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি সাহেব যেভাবে আদিবাসীদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন ইতাপূর্বে কোন এমপি মন্ত্রী করেন নি। শিক্ষা বৃত্তি, বিনা টাকায় তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা, প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা, শিক্ষা উপকরণ। কৃষি উপকরণ, সেলাই মেশিন প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করছেন বলেই তার আর পিছিয়ে পড়া জনগৌষ্ঠি নয়। এমপি মহোদয়ের কারনে তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এককই মন্তব্য করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আকতাউজ্জামান। আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করেন সিসিবিভিও এনজিও।
সমন্বয়কারী নিরাবুল ইসলাম নিরব বলেন, রাজশাহী ১ আসনের এমপি আদিবাসীদের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছন বলেই তারা এখন এগিয়ে যাচ্ছেন। আগে তাদের ১২ মাস কাজ ছিল না। এখন তারা নিজ এলাকায় কাজ না পেলে রাজশাহী শহরে কাজের জন্য আসচ্ছেন। তাদের নিজের খাদ্য তারা নিজেরাই যোগান দিতে পারে। তারা বন্যায় সময় ত্রান দিতে পারেন। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন, সরকারী, বেসরকারী, এনজিওসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকুরী পােচ্ছন। তবে তিনি বলেন তাদের ভূমি সমস্যা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই, খাবার পানির সমস্যা, রাস্তার সমস্যা রয়েছে। আগে তারা ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা না পেলেও এখন তারা ঠিকই পাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদগণ তাদেরকে কিছুটা সুযোগ দিচ্ছেন। আপনার মন্তব্য প্রদান