খোকসায় তিন শতাধিক গাছ কেটেছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা!
শেখ মোঃ আকরাম হোসেন খোকসা প্রতিনিধি:: খোকসায় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায় ২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের রাস্তার তিন শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ কিছু গাছ উদ্ধার করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। গাছ হরিলুটের বিষয়ে এলজিইডির কর্মকর্তাদের দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
পদ্মা নদীর জগন্নাথপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১ হাজার ৯০০ মিটার পাকা রাস্তা সংস্কারের কাজ গত সপ্তাহে শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ সুযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে বেড়িবাঁধের সব গাছ নিলামে কিনে নিয়েছেন বলে মিথ্যা প্রচার করেন। এক পর্যায়ে তারা জগন্নাথপুর স্লুইসগেট থেকে শুরু করে গোসাইডাঙ্গী মসজিদ পর্যন্ত বাঁধের পাকা রাস্তার দু’পাশ থেকে ফলদ ও কাঠ জাতীয় প্রায় ৩০০ গাছ কেটে নেন। এর দাম প্রায় ৬ লাখ টাকা।
সরকারি বাঁধের গাছ হরিলুট নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে এলাকাবাসী। এর পর কর্মকর্তারা কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। চিঠি চালাচালি শুরু হয়। বেড়িবাঁধের ওপর রাস্তা সংস্কার ও বর্ধিতকরণ সম্পর্কে অবহিত না করা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। বুধবার রাতে পুলিশ কিছু গাছের গুঁড়ি উদ্ধার করেছে। তবে গাছ হরিলুটে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ঠিকাদারের কেটে ফেলা কিছু গাছ নিয়ে গেছেন বলে স্বীকার করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা। বেড়িবাঁধ থেকে গাছ কাটার ঘটনায় নাম আসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বজলুর রহমান স্বীকার করেন, তার দলের স্থানীয় নেতারা গাছ কেটে নিয়েছেন। তবে গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত নেতাদের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। অনেক চেষ্টা-তদবির করে তার নিজের বাড়ির সামনের ১০০ গাছ তিনি রক্ষা করতে পেরেছেন বলেও দাবি করেন।
উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গোপগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, গাছ লুটের সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। গাছ কাটায় তার নাম ব্যবহার করার সঙ্গে জড়িত নেতাদের ডেকে তিনি শাসন করেছেন বলেও দাবি করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমারখালীর শাখা কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধের ওপর থেকে গাছ কাটার খবর পেয়ে একজন কর্মকর্তাকে তিনি সরেজমিন পাঠিয়েছিলেন। সরকারি বেড়িবাঁধে থেকে কয়েকশ’ আম ও কাঁঠাল গাছ কাটা হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এই কর্মকর্তা বলেন, বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করে, কিন্তু সেখানে এখন কাজ করে এলজিইডি। রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থা এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতির কারণে গাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছেন। গাছ কাটার জন্য তিনি কাউকে আদেশ-নির্দেশ দেননি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম মেহেদী মাসুদ বলেন, এ পর্যন্ত তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে ২-৩টি গাছের গুঁড়ি তিনি উদ্ধার করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফ্ফারা তাসনীন বলেন, পুলিশ পাঠিয়ে গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। ওসি কিছু গাছ উদ্ধার করেছেন।