কালিয়াকৈরে লগু ও পার্চিং পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় বোরো ধান আবাদ শুরু করেছে কৃষক। ঘাস ফড়িং ও মাজরা পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা করতে এবারই প্রথম লগু ও পাসিং পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ করছে কৃষক। লগু ও পাসিং পদ্ধতিকে আধুনিক পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে আশানুরুপ ভাল ফলন পেলে আগামী বোরো মৌসুমে এই পদ্ধতিতে উপজেলায় শতভাগ বোরো ধান আবাদ করা হবে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষক সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলায় মোট ফসলি জমি ২৩ হাজার ৯৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৯০ভাগ জমিতে বোরো ধান আবাদ করা শেষ হয়েছে। এবারই প্রথম উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে লগু ও পার্চিং পদ্ধতিতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ করেছে কৃষক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বোরো ধান ক্ষেতে গুছির ১০ লাইন পর পর ১টি করে লাই ফাঁকা দেওয়া হয়েছে। ধান ক্ষেতের আনুমানিক প্রতি শতাংশের মাঝে একটি করে গাছের ডালা পুতে দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় লগু ও পার্চিং পদ্ধতি।
লগু পদ্ধতি হলো, বোরো ধানে গুছি দেওয়ার সময় ১০ লাইন পরপর একটি লাইন ফাঁকা দেওয়া হয়। যাতে করে ভেতরে আলো বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে ধান গাছের কুশি বেশি হয়। আর বিশেষ করে ভেতরে আলো প্রবেশ করায় ঘাস ফড়িং ও মাজরা পোকা ধান ক্ষেতে কম বাসা বাঁধে। কারণ ঘাস ফড়িং ও মাজরা পোকা অন্ধকার বেশি পছন্দ করে।
পার্চিং পদ্ধতি হলো, ধান ক্ষেতের প্রতি শতাংশের মধ্যে একটি গাছের ডালা পুতে দেওয়া হয়। যাতে ঐ ডালে পাখি বসতে পারে। আর ঐ ধান ক্ষেতে কোন ক্ষতিকারক পোকা মাকড় ও ঘাস ফড়িং থাকলে পাখি তা খেয়ে ফেলে। এ পদ্ধতি প্রাচীন কাল থেকেও অনেক কৃষকই ব্যবহার করে আসছে।
কৃষক মো. এমারত হোসেন জানান, গত মৌসুমে ক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকজন কৃষক ফসল ঘরেই তুলতে পারে নাই। তাই এবছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে লগু ও পাসিং পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ভাল ফলন পেলে শতভাগ এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি গবেষনা করে সবচেয়ে বেশি ফসলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবার তারই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের লগু ও পার্চিং পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ করলে ভাল ফসল পাওয়া যাবে। বোরো ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে পোকা মাকড়, ঘাস ফড়িং বা মাজরা পোকা। এ পোকা গুলো অন্ধকারে থাকতে বেশি পছন্দ করে। লগু পদ্ধতির ফলে ঘাস ফড়িং ও মাজরা পোকা কম বাসা বাঁধে। পার্চিং পদ্ধতিতে পাখি ক্ষতিকারক ঘাস ফড়িং ও মাজরা পোকা খেয়ে ফেলে। এতে পোকা মাকড় ফসলের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। আবার কিটনাশকও কম প্রয়োগ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে অধিক ফলনের আশা করছি। আশানুরুপ ভাল ফলন পেলে আগামীতে এই পদ্ধতিতে উপজেলায় শতভাগ বোরো ধান আবাদ করা হবে।