কাঁকড়া সম্পদ বর্তমান অবস্থা ও টেকসই উন্নয়নে কাঁকড়া ও কুচিয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রাণালয়ের যুগ্ম-সচিব অসীম কুমার বালা বলেছেন, মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ অবদান রয়েছে। স্বাধীনতারপর সমুদ্রের বিশাল জলসীমার গবেষণার জন্য তিনিই প্রথম রাশিয়া থেকে ১০টি জাহাজ এনে ছিলেন। বর্তমান সরকারও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরাও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যার ফলে মৎস্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বিদেশে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিদেশে যে মৎস্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে কাঁকড়ার মূল্যায়ন ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি আরো বলেন, মান ভাল হওয়ায় বিদেশে বাংলাদেশের কাঁকড়ার গুরুত্ব ও চাহিদা অনেক বেশি। তিনি বলেন, দেশের নন্দিত ক্রিকেটার সাকিব-আল হাসানও অস্ট্রেলিয়ায় কাঁকড়া রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতোমধ্যে তাকে এনওসি দেওয়া হয়েছে। তিনি কাঁকড়া ও কুচিয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য গুণগতমান বজায় রেখে সকলের প্রতি কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি গবেষণার সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, পাবদা, টেংরা সহ যে সব মাছ ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তা চাষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফলতা আসলে বিদেশে মুক্তা রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করতে জাতীয় পুরষ্কার প্রদান ও কাঁকড়া উৎপাদন ও রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ করতে আগামীতে জাতীয় পর্যায়ে কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের পুরষ্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দেন।
তিনি শনিবার সকালে পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্র অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চলমান বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত “বাংলাদেশের কাঁকড়া সম্পদ : বর্তমান অবস্থা ও টেকসই উন্নয়ন” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞানগর্ভ ও দুরদর্শী বক্তব্য আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণ করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাষীর প্রথম চাহিদা হচ্ছে সীড ও ফিড। আর এ লক্ষেই প্রকল্পে কাঁকড়া ও কুচিয়ার পোনা উৎপাদনের লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কুচিয়ার সফলতা ও কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা এসেছে।
তিনি বলেন, দেশের বিশাল সম্ভাবনাময় মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে বিজ্ঞানীদের একার পক্ষে কাজ করা অনেক কঠিন। এ জন্য তিনি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে একযোগে কাজ করার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। সবাই একযোগে কাজ করলে ভবিষ্যতে গবেষণা ও দেশ সমৃদ্ধ হবে উল্লেখ করে আরো বলেন, এক সময় স্বাদু পানির মৎস্য সম্পদ নিয়ে বেশি বেশি গবেষণা করা হয়েছে। তবে এখন উপকূলীয় অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন মৎস্য সম্পদ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি’র একান্ত সচিব মোহাম্মদুল্লাহ বলেন, দেশ এখন কৃষি, খাদ্য, মাছ ও ফল-মূলে স্বয়ংসম্পন্ন। যার ফলে বাজারে মাছ ও খাদ্যের কোন ঘাটতি নাই।
তবে এসবের এখনো গুণগতমান নিশ্চিত করা যায়নি এজন্য তিনি জনসচেতনা বাড়ানোর উপর গুরুতারোপ করেন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. ডুরিন আখতার জাহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার বিভাগীয় উপ-পরিচালক রণজিৎ কুমার পাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফকরুল হাসান। “উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণার ভূমিকা” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন. বাগেরহাট চিংড়ী গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খান কামাল উদ্দীন আহম্মেদ।
“বাংলাদেশের কাঁকড়া সম্পদ বর্তমান অবস্থা ও টেকসই প্রযুক্তি উন্নয়নে গবেষণা অগ্রগতি” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন. লোনাপানি কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ লতিফুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. খন্দকার আনিসুর রহমান, ড. গাউছিয়াতুর রেজা বানু, ড. সরোয়ার হোসেন, ড. ইউছুফ আলী, খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এনামুল হক, অনুরাধা ভদ্র, উপ- পরিচালক নিলুফা বেগম, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস, মনিরুল ইসলাম মামুন, কাউন্সিলর শেখ মাহাবুবর রহমান রনজু, কাঁকড়া চাষী তারক চন্দ্র সানা ও ব্যবসায়ী সুজিত কুমার মন্ডল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দেবাশীষ মন্ডল। এরআগে অতিথিবৃন্দ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রের নবনির্মিত কাঁকড়া হ্যাচারী পরিদর্শন করেন।