করোনা’র প্রভাবে আর্থিক সংকটে জামনগর শাঁখা পল্লী

ফজলে রাব্বি, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ সোনাতন ধর্মালম্বীরা শঙ্খ /শাঁখা সামগ্রী বেশি ব্যবহার করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বধবা নারীরা শাঁখার বালা ব্যবহার করেন। হিন্দু নারীর বিয়ে সম্পন্নকরণের সময় গৌরিপুজা শেষে বণিক সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি বা ঠাকুর কন্যার হাতে শাঁখার বালা পরিয়ে দেন। স্বামীর মৃত্য পর্যন্ত শাঁখার বালা ব্যবহার করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর লাশ শ্মশানে দাহের পূর্ব মুহূর্তে হাতে পরা শাঁখার বালা ভেঙ্গে ফেলে দেয় এবং সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলে। হিন্দুরা শঙ্খ ফুঁকিয়ে সুমধুর সুর সৃষ্টির মাধ্যমে পুজা-পার্বণের কার্যক্রম শুরু করে। পল্লীর নব বঁধু ও কিশোরীরা মুখের দাগ দূরিকরণে শাঁখার গুড়ো কচি ডাবের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করে থাকে।
এছাড়া কসমেটিকস তৈরিতে শাঁখার গুড়ো ব্যবহার হয়ে থাকে। শঙ্খ বা শাঁখার জন্ম সমুদ্রের তলদেশ। বাংলাদেশে ভারত ও শ্রীলংকা থেকে শঙ্খ আমদানি করে পুরুষ শিল্পীরা সেই শঙ্খ মেশিনে কেটে বালা ও আংটিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। পরে নারী-পুরুষ শিল্পীরা নিপুণ হাতে এগুলোর উপর কারুকার্য করে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে শাঁখা পল্লীর তৈরি সামগ্রী বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগর শাঁখা পল্লী। কাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন এনজিও-র ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন অনেক কারিগর।
সরেজমিনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজির সুশীতল ছাঁয়ায় ঘেরা জামনগর শাঁখাপল্লী। এ পল্লীর বণিক সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের পৈত্রিক ব্যবসা শাঁখা শিল্পের সাথে জড়িত। শাঁখা তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে সারা বছর স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলে ব্যবসায়ি ও কারিগরদের। কিন্তু সেই স্বাচ্ছন্দ্যে বাধ সেঁধেছে করোনা ভাইরাস। বর্তমানে করোনার প্রভাবে লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় তৈরি শাঁখা সামগ্রী বিক্রি করতে না পেরে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এবং আর্থিক সংকটে ভুগছে ব্যবসায়ি ও কারিগররা। শাঁখা ব্যবসায়ি কেশব চন্দ্র সেন জানান, ব্যবসা অত্যন্ত মন্দা।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। লাখ লাখ টাকা মূল্যমানের তৈরি শাঁখা সামগ্রী বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পল্লীর সবাই আর্থিক সংকটে ভুগছেন। কারিগর শ্রী জয় সেন ও হাসি রানী সেন (৪০) জানান, তাঁরা শাঁখা শিল্পে সংপৃক্ত। তাঁরা শাঁখা সামগ্রী তৈরি ও কারুকার্য করেন। স্বাচ্ছন্দেই সংসার চলতো। কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ৩ মাস যাবত তেমন কাজ না থাকায় তাঁরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন। তাঁরা সরকারি ভাবেও তেমন সাহায্য -সহযোগিতা পায়নি।
এ ব্যাপারে জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস ফোনালাপে জানান, করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারিভাবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শাঁখা শিল্পে সংপৃক্তদের একাধিক বার আর্থিক ও খাদ্য সহযোগিতা করা হয়েছে। শাঁখা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পর্যায়ক্রমে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।