প্রধান মেনু

করতোয়া ট্র্যাজেডি এক বছর পূজা-অর্চনা ও স্বজন হারাদের আহাজারিতে পালন হলো নৌকাডুবির এক বছর

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় থানা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটের নৌকা ডুবির এক বছর পূর্ণ হলো।
গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট দিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকা ডুবিতে ৭২ জনের সলিল সমাধি ঘটে। স্মরণকালের ভয়াবহ নৌকা ডুবির ঘটনার পরই উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও স্থানীয় উদ্ধারকারীরা। একে একে উদ্ধার করা হয় ৭১টি নিথর দেহ। এ ঘটনায় বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন নিখোঁজ রয়েছে।
একই উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রায় ১০৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা নদী পার হওয়ার সময় মাঝপথে ডুবে যায়। এসময় অনেকে সাঁতরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন নারী-শিশুসহ ৭২জন পূর্ণার্থী।
মৃত ৭১ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৬ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের ২জন রয়েছেন। মৃত ৭১ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন, পুরুষ ১৯ জন এবং শিশু ২২ জন।
মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা রানী (৩৯), শৈলবালা, সনেকা (৫৫), হরিকিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), ভূমিকা রায় পূজা (১৫), আঁখি রানী (১৫), সুমি রানী (৩৮), পলাশ চন্দ্র বর্মন (১৭), ধৃতি রানী দাস (১০) ও সজিব রায় (১০)।
দুর্ঘটনার পর সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় নিহতের পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও সেইসব পরিবারগুলো আজও খুঁজে ফিরছে স্বজন হারানো স্মৃতি। দুর্ঘটনার পরই জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে ওই দুর্ঘটনায় ঘাট ইজারাদারকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করে। ঘাট ইজারাদার ও নৌকার মাঝি এখন জেল হাজতে রয়েছে।
দুর্ঘটনার পর এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন আউলিয়া ঘাটে একটি ওয়াই আকৃতির ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন।
একনেকে ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্পটি পাস হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। যা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান জানান, বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৯১ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ওয়াই আকৃতির ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া শেষের দিকে।
টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে তা অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।