ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া বিশ্বাস ছিলো একদিন ৭ই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ – আজ তা প্রমাণিত। আমরা বিশ^াস করতাম একদিন এ ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। বঙ্গবন্ধুর অলিখিত ১৮ মিনিটের এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছিলো।
পৃথিবীতে অন্য কোন ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ^ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রতিক্রিয়া জানাতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সেদিন রেসকোর্স ময়দান মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ছিল, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই এ সমাবেশে হামলা চালাবে।
বঙ্গবন্ধু এ ভাষণের মাধ্যমে একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, অন্যদিকে পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নেননি। ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছুই করার ছিল না। পরদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলেছিল, চতুর মুজিব আমাদের সামনে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন, আমরা কিছুই করতে পারলাম না। বঙ্গবন্ধুর কৌশল ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী না হয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। সেদিন তিনি সফল হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী ছিলেন, ভাষণে তিনি একদিকে স্বাধীনতার ডাক দিলেন, অন্যদিকে সুকৌশলে ৪টি শর্তের বেড়াজালে শাসকের চক্রান্তকে আটকে দিলেন এবং সামরিক শাসকদের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করার পাতানো ফাঁদেও পা দিলেন না। একদিকে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যেমন বললেন; তেমনি চার শর্তের জালে ফেললেন শাসকদের ষড়যন্ত্রের দাবার ঘুঁটি। তিনি বললেন, সামরিক শাসন তুলে নিতে হবে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং আন্দোলনে নিহতদের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
একই সাথে তিনি বাঙালি জাতিকে বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর। মনে রাখবা- রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট দিকনিদের্শনা ছিল। সে মোতাবেক আমরা কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা ছিলেন, তিনি অন্তরের গভীরে যা বিশ^াস করতেন, বক্তৃতায় তাই ব্যক্ত করতেন। ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তিনি তা থেকে বি”্যুত হননি। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের সহযাত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আমাদের
বলেছিলেন, সংগ্রামী জনতার উদ্দেশে তিনি কী বলবেন, তা নিয়ে ৬ মার্চ সারারাত তিনি ভেবেছেন। বেগম মুজিব বলেছিলেন, ‘তুমি যা বিশ^াস করো, তাই বলবে।’