আজ থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে চার দিনব্যাপী ওরশ শুরু

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে বিশ্বওলী হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের চার দিনব্যাপী বিশ্ব ওরশ শরীফ আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে । দরবারের ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মূল ভেন্যুতে অসংখ্য স্থাপনা ও সামিয়ানা, সুউচ্চ সুসজ্জিত তোরনে ৪ দিনের শান্তিকামী মানবতার এ বিশ্ব মহামিলনমেলায় পর্যায়ক্রমে অর্ধ কোটিরও অধিক মানুষ সমবেত হবেন বলে দরবার শরীফ এর প্রেস সচিব শামীম হায়দার জানান। আগামী মঙ্গলবার সকালে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) এর পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত ও আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে ।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এ মহাসমাবেশে প্রকৃত ইসলামের মানবিক মূল্যবোধের আদর্শের আলোকে সকল অশুভ প্রবৃত্তি থেকে তরীকায়ে নক্শবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়ার আদর্শের সমাহারে আলোকিত শিক্ষাই নিহিত আছে বিশ্ব ওলীর মহাপবিত্র বিশ্ব ওরস শরীফে। বিশ্ব ওরস শরীফে যোগদানে দেশ বিদেশ থেকে শান্তিকামী মানুষের অবিরাম কাফেলা গত এক সপ্তাহ যাবত দরবার শরীফে আসতে শুরু করেছে। সড়ক ও নৌ-পথে এখন হাজার হাজার বাস, মাইক্রোবাস, লঞ্চ, ট্রলার ও অন্যান্য বাহনের অবিরাম কাফেলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূল ভেন্যুর সকল প্রবেশ পথে শুধূ মানুষ আর মানুষ। লাখ লাখ নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, তরুন, তরুনী, আবাল, বৃদ্ধ.বনিতা। পথে পথে এলাকাবাসী পানি, খেজুর ও আখের রস, সরবত, ডাবের পানিসহ নানা খাদ্যদ্রব্য সহকারে খোদা অন্বেষী মেহমানদের হাসিমুখে বরন করছেন।
ওরশের আনুষ্ঠানিকতা চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুযায়ী বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গতকাল শুক্রবার জু‘মা নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের আধ্যাত্মিক প্রতিনিধি পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মাহ্ফুযুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব ও পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ছাহেব সুবিশাল এ জামাতে নামাজ আদায় করেন। খোদা অন্বেষী লক্ষাধিক শান্তিকামী মুসলমান জামাতে অংশগ্রহন করেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফযর ৭ দশকের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী রওজা শরীফ কমপ্লেক্সে স্থাপিত সুউচ্চ টাওয়ারে আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহু আকবার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
৪ দিনে প্রতি ওয়াক্তিয়া নামাজের সাথে নফল ইবাদত বন্দেগী, তেলাওয়াতে কালামে পাক, দফায় দফায় মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মুনাজাত, মোরাকাবা মোশাহেদা, জেকের আসকার, সকল সৃষ্টির মূল বিশ্ব নবী রাসুলে পাক (সা:) এর প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া এবং তদীয় আদর্শের আলোকে বিশ্বব্যাপী ¯িœগ্ধ, সুরভিত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় জীবন সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের সাধনা সর্বোপরি প্রকৃত ইসলামের মহাশ্বাশত রূপ আলোকপাত করে নানামুখী বয়ান অব্যাহত থাকবে। বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের আধ্যাত্মিক প্রতিনিধিদ্বয় সমবেতদের দফায় দফায় সাক্ষাত ও বিশেষ নসিহত দান করছেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারেও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়সহ নানা সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ মানুষ ওরশে সমবেত হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য অক্ষন্ন রেখে বিশাল কমপাউন্ড নির্মাণ করা হয়েছে।
এবাদত বন্দেগী, আহার, বিশ্রাম, চিকিৎসা সেবা, গাড়ী পার্কিং, অগ্নি নির্বাপন, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সুবিধাসহ সার্বিক আয়োজনে ৫৮ টি ডিপার্টমেন্টে ২ লক্ষাধিক কর্মী একযোগে কাজ করছে। ভাত, গোশত ও ডাল রান্নার পৃথক পৃথক বিশাল বিশাল পাকশালায় বিরতিহীন রান্না, বিশাল বিশাল খাবার মাঠে উপচে পড়া ভীড় – যেখানে ২ লক্ষাধিক মুসলি¬ এক সাথে বসে খাবার খেতে পারছেন। সে সাথে ওজু ও পয়ঃপ্রনালির জন্য পর্যাপ্ত পানি, ৪ হাজার টয়লেট এবং স্থানীয়দের উদ্যোগে আরো ৬ হাজার টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
ওরসে নিরাপত্তার জন্য ৫ শতাধিক সিসি টিভি ক্যামেরা, ৫৬ টি আর্চওয়ে গেট, সহ¯্রাধিক হ্যান্ড হেল্ড ম্যাটাল ডিটেক্টর, ওয়াকিটকি, ৬৩ টি সুউচ্চ অবজারভেশন পোষ্ট, ২ হাজার সার্চ লাইট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া অগ্নি নির্বাপনে দমকল ইউনিটও মোতায়েন রাখা হয়েছে। ৩২ টি সুবিশাল কার পার্কিং এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কয়েক হাজার কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। কাওরাকন্দি, চরবলাশিয়া, শয়তানখালী, গোপালপুর, চন্দ্রপাড়া ঘাটসহ ৫ টি নৌ বন্দরে নৌ পথে আগত মানুষের জন্য স্থাপিত ক্যাম্পসমুহ এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, কাঁঠালবাড়িয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে স্থাপিত ক্যাম্পসমূহে বিপুল সংখ্যক কর্মী কাজ করছেন আগতদের সহায়তায়। এছাড়া হেলিকপ্টার ওঠা নামার জন্য হেলিপ্যাডও রাখা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ৫০০ কিলোওয়াটের ১০ টি জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। আর ২ সহ¯্রাধিক লাউড স্পীকার ও সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে চলছে এবাদত বন্দেগী, ওয়াজ নসিহতের কাজ। জরুরী চিকিৎসা সেবা সুনিশ্চিতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল হাসপাতাল, ভ্রাম্যমান মেডিকেল ইউনিট ও এ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। এছাড়া মিডিয়া সেন্টার ও বিপুল সংখ্যক বুক স্টল রয়েছে।
আগামী মঙ্গরবার ওরশের শেষ দিন সকালে বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত ও আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মুনাজাত পরিচালনা করবেন বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের আধ্যাত্মিক প্রতিনিধি পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মাহ্ফুযুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব ও পীরজাদা আলহাজ্জ খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ছাহেব।
১৯৫৩ সালে আপন মুর্শিদ খাজায়ে খাজেগান হযরত শাহ্সূফী খাজা এনায়েতপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের নির্দেশে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী সাহেব হেদায়েতের বাণী প্রচারে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রত্যন্ত এক পল্লী আটরশিতে আগমন করেন। পরিক্রমায় বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেব চলমান এবং অনাগত বিশ্বের শান্তিকামী বিশ্বমানবতার জন্য এভাবেই নিজেকে তিল তিল ক্ষয় করে মহা তীর্থস্থান গড়েন। যা পর্যায়ক্রমে কুড়ে ঘরের জাকের ক্যাম্প থেকে জাকের মঞ্জিল এবং পরবর্তীতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল রূপে আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত।
(মোশাররফ হোসেন, সদরপুর, ফরিদপুর)