অবসরে গেলেন পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোহিত খ্যাত জনপ্রিয় ডাক্তার প্রভাত কুমার দাশ

দীর্ঘ কর্মময় জীবনের ইতিটেনে অবসরে গেলেন পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনপ্রিয় ডাক্তার প্রভাত কুমার দাশ। যে মানুষটি হাসপাতালকে মন্দির ও রোগীকে দেবতা মনে করে পুরোহিত হয়ে সারাজীবন পূজা করে এসেছেন সেই মানুষটিকে নিয়মের বাধ্যবাধকতার কারণে চলে যেতে হচ্ছে হাসপাতাল নামক মন্দির থেকে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা হিসাবে সোমবার তিনি শেষ অফিস করেন। একজন মানুষ সব শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত ডাঃ প্রভাত কুমার দাশ। জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সর্বোপরী সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় একজন ডাক্তার ছিলেন প্রভাত কুমার। যিনি ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে কর্মময় জীবনের বেশিরভাগ সময়পড়ে থেকেছেন নিজ এলাকায়। সেবা করেছেন এলাকার মানুষের।
তার এ বিদায় মুহূর্তে দেশে যখন চিকিৎসা সেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে ঠিক সেই মুহূর্তে ডাঃ প্রভাতের সেবা ও আদর্শ নবাগত চিকিৎসকদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। উল্লেখ্য, জেলার পাইকগাছা উপজেলার কাটিপাড়া গ্রামের প্রয়াত মনোরঞ্জন দাশের মেঝ ছেলে প্রভাত কুমার দাশ ২১/১১/১৯৮৫ তারিখে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সহকারী সার্জন (ইনসার্ভিস ট্রেইনিং) হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। পরে ফরিদপুর, সাতক্ষীরার তালায়, খুলনার পাইকগাছার কাটিপাড়ায় এবং ১৭/০৮/১৯৯৮ তারিখে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইওসি (গাইনী ও অবসর) প্রশিক্ষণ শেষে ৯৯ সালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২০০০ সালে ডুমুরিয়া, পরে পাইকগাছা-কয়রায় ২০/০৫/২০০৩ তারিখ হতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাইকগাছায় কর্মরত থাকাস্থায় ১২/০৫/২০১৫ তারিখে পদোন্নতি পেয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা হিসাবে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে যোগদান করেন।
সেখান থেকে তিনি পুরনায় ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর পাইকগাছায় যোগদান করেন। চাকুরির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি নিজ এলাকা পাইকগাছায় কর্মরত থাকেন। চাকুরির বেশিরভাগ সময় তিনি নিজ এলাকায় কর্মরত থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে আস্থাভাজন ডাক্তার হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুরোধে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি সারা দেশের সেরা ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে পাইকগাছাকে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। সোমবার তার অবসরের কথা শুনে সাধারণ মানুষের ন্যায় ব্যথিত হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বৃন্দ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার নার্গিস বানু জানান, স্যার আমাদের একজন ভাল অভিভাবক ছিলেন। তিনি একজন চিকিৎসকের পাশাপাশি দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতা ফোরামের সভাপতি জিএমএম আজাহারুল ইসলাম জানান, ডাঃ প্রভাত সেবার মানসিকতা নিয়েই সব সময় কাজ করেছেন। যার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন আস্থাভাজন চিকিৎসক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, তার চিকিৎসা নয় অনেক সময় তার ব্যবহারেই অনেক রোগী ভাল হয়ে গেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ স ম বাবর আলী জানান, ডাঃ প্রভাত সাধারণ মানুষের জন্য একজন নিবেদিত চিকিৎসক।
তার কর্ম ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক বলেন, ডাঃ প্রভাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাণ। তিনি পরিবার পরিজন ও ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে সারা জীবন এলাকার মানুষের জন্য সেবা করেছেন। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী তাকে অবসরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু তার সেবা ও কর্ম এলাকার মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে তাকবে। দক্ষ এ চিকিৎসককে বিদায়ের শেষ মুহূর্তে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা মানউন্নয়ন কমিটির সভাপতি এমপি নুরুল হক জানিয়েছেন। শক্তিশালী বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও প্রশাসনিক তদারকি জোরদারের দাবী